ক্যাম্পাস

জবিতে ভবনের নামেই সীমাবদ্ধ ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি

১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে যে কয়েকজন ছাত্র নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহমদ ছিলেন অগ্রগামী।

Advertisement

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হলেও তার স্মৃতি রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসেও এই ভাষা সৈনিককে নিয়ে কোনো আয়োজন হয় না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এর আগে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে পুরোনো বিজনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত বাংলা ও ইতিহাস বিভাগ ও নিচতলায় মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এই এক ভবনের নাম ছাড়া আর কোথাও নেই তার স্মৃতিফলক কিংবা ভাস্কর্য।

প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানে খোদ ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিনকে নিয়ে থাকে না বিশেষ কোনো আয়োজন। এছাড়াও রফিক উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি এই ভাষা শহীদের স্মৃতি ও প্রেক্ষাপট সবার সামনে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য রফিক উদ্দিনকে নিয়ে ভাষার মাসে ও অন্যান্য সময়ে আলোচনা, স্মরণ সভা, সেমিনার আয়োজন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাসান সজীব বলেন, ভাষার জন্য প্রথম বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র রফিক উদ্দিন। এটা এ প্রতিষ্ঠানের জন্য গৌরবের। অথচ জবিতে একটি ভবনের নাম বাদে তার স্মৃতি বহন করে এমন কিছুই নেই। অন্তত এ ক্যাম্পাসে তার একটি ম্যুরাল, স্মৃতি সংগ্রহশালা করা যায়। এছাড়া ভাষার মাসে অন্তত ভাষা শহীদ রফিকের পরিবারের সদস্যদের এনে সম্মাননা দেওয়া যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক স্টান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, আমরা এবার ভাষা শহীদ রফিকের স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভা রেখেছি। সেখানে সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংসদের আয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। যেখানে ভাষা শহীদ রফিকসহ সকল ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের জীবন ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ভাষা শহীদ রফিকের স্মরণে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

জানা গেছে, ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে (বতর্মানে রফিকনগর) আবদুল লতিফ মিয়া এবং রাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেন প্রতিবাদী ও সাহসী সন্তান রফিক উদ্দিন। ১৯৪৯ সালে রফিক স্থানীয় বায়রা স্কুলে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে। এরপর তিনি ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে।

Advertisement

আরএএস/এমআরএম/এএসএম