আইন-আদালত

হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তমালের জামিন আবেদন

বহুল আলোচিত ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারিক বিন জোহর ওরফে তমালের জামিন আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসতে পারে।

Advertisement

জামিন আবেদনের বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও মো. শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শুনানির জন্যে থাকলেও এদিন‌ শুনানি করেননি তমালের আইনজীবী সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তাই আগামী সপ্তাহে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসামি তমালের পক্ষে আইনজীবী মো.কামরুল ইসলাম এ জামিন আবেদন করেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে থাকতেন তিনি।

Advertisement

এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়। পরে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

২০১৩ সালের ২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু বিচার। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটিতে একই ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক এ বি এম নিজামুল হক ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়।

মৃত্যুদনণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন-ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। আর যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন- এইচএম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

পরে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়।

Advertisement

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া যে দুই আসামি হাইকোর্টে খালাস পান তারা হলেন-সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক ও নূরে আলম (পলাতক) ওরফে লিমন। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারের (পলাতক)। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ১৩ আসামির মধ্যে থেকে এইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা খালাস পান হাইকোর্টে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১১ আসামির সবাই পলাতক ছিলেন, যাদের মধ্যে তমাল ছিলেন অন্যতম।

গত ২০১৮ সালের ২৬ জুন ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক আব্দুর রহমান সরদার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস