ক্যাম্পাস

২ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত, স্বজনদের ক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ফুয়াদের রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো হল প্রশাসন। কমিটিকে বলা হয়েছিলো ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। তবে কমিটি গঠনের দুই মাস ১০দিন অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদনের কাজ এখনো শেষ হয়নি বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক ড. হুমায়ুন কবির।

এর আগে, ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক রবিউল ইসলাম, ড. ইসমাইল হোসেন ও কে.এম. মনিরুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিভিন্ন কারণে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হচ্ছে আমাদের। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে হল প্রভোস্টের কাছে জমা দিয়েছে, যা এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি’

Advertisement

এছাড়া ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ছুটি থাকায় এবং হল প্রভোস্ট বিভাগের ট্যুরে বাইরে থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে হল প্রভোস্ট ট্যুর থেকে চলে আসলে দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি/।

এ বিষয়ে শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. একরামুল ইসলাম বলেন, ‘হলের তদন্ত প্রতিবেদন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ না। পুলিশের রিপোর্টটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তারা সেভাবে রেসপন্স করছেন না। হল প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

তিনি আরও বলেন, ফুয়াদের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য আমি হাতে পেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি বরাবর হস্তান্তরও করেছি। আশা করি আগামী সপ্তাহেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর জমা দিতে পারবো।

তদন্ত প্রতিবেদন বিলম্ব করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃত ফুয়াদের পরিবার। এ বিষয়ে ফুয়াদের ভাই মো. আব্দুল ফাত্তাহ রাফি বলেন, ‘হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউ তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। আজ দিবে, কাল দিবে বলে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর দুমাস পরেও তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি আমরা। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক"।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ফুয়াদ তাদের সন্তানের মতো। তারা তাদের একটি মেধাবী সন্তানকে হারিয়েছে, কিন্তু তাদের সন্তানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে তাদের কোনোরকম উদ্যোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আর বিলম্ব না করে, দ্রুত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করবে বলে আমি আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ‘আমরা এখনো হল থেকে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। তবে হল প্রশাসন জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। আর পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের জন্য ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো হাতে পাননি বলে পুলিশের কর্মকর্তারা আমাদেরকে জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।’

২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলের ১৮৪ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল খতিবকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ নিয়ে যান তার সহপাঠীরা। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্ত শেষে গত ১১ডিসেম্বর তার মরদেহ গাইবান্ধায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানাজার নামাজ শেষে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজ গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হল থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের সময় তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল এবং তার বুকসহ বিভিন্ন স্থানে কালশিটে দাগ ছিল। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন তৈরি হ্রণ াসবহিতহয়েছে এটি কি কোনো সাধারণ মৃত্যু, নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু?

মনির হোসেন মাহিন/এনআইবি/জেআইএম