দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে পরীক্ষা শুরুর আগেই বাইরে প্রশ্নপত্রের ছড়াছড়ি

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে চলমান এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় নাগেশ্বরী নিউ প্রতিশ্রুতি নামক একটি বেসরকারি স্কুলের পরিচালক ও এক শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষাকালে এ ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ ও নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার এসএসসির ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগে একটি উত্তরপত্রের ছবি কিছু অভিভাবকের মোবাইলে ফোনে হোয়াটস অ্যাপ ম্যাসেঞ্জারে আসে। ছবিগুলো আসে সাংবাদিকদের কাছেও। পরে ছবি নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা।

ছবিটিতে দেখা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯.৫৩ মিনিটে গ্যালাক্সি এটুফোর মোবাইল দিয়ে মঞ্জুর নামের একজন তুলেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্জুর নাগেশ্বরী উপজেলা নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষক। আগে থেকেই নিউ প্রতিশ্রুতি নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিল। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কচাকাটা কলেজের ড্যমেনেস্টটর শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষক মঞ্জুরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার বলেন, মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। আপাতত দেখা গেছে ছবি তোলা ফোন এটি নয়। তারপর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ক্লিয়ার বোঝা যাবে।

এ বিষয়ে নিউ প্রতিশ্রুতি কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা কচাকাটা কলেজের ড্যমেনেস্টটর শহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক কিছু জানতে চেয়েছে বলেছি। কেন ডেকেছে জানি না। একই কথা বলেছেন নিউ প্রতিশ্রুতির শিক্ষক মঞ্জুর।

আব্দুল কাদের নামের এক অভিভাবক বলেন, নাতনিকে নিয়ে পরীক্ষার হলে যাই। বাইরে দেখি মাস্টাররাও নকল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। নাতনি প্রতিদিন বের হয়ে বলে ভেতরে অনেক স্যার নকল নিয়ে যান। একই কথা বলেন অভিভাবক জহির উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম।

তবে কেন্দ্রসচিব মোশারফ হোসেন বলেন, স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কেন্দ্রের ৭ নম্বর কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা আব্দুস সাফি নামে এক শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক তার ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত আপত্তিকর কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই রকেট বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর থেকে উত্তরপত্র ছড়াছড়ির বিষয়টি আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমি নিজেও পাই। কিন্তু কোথা থেকে হচ্ছে এটা বলা যাচ্ছে না। এটা নাগেশ্বরীর বাইরে থেকেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ বলেন, পরীক্ষা কক্ষে স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় এক শিক্ষককে চলমান পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও তথ্য রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে। আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, এমন ঘটনা কথা শুনেছি। প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/আরএইচ/জেআইএম