রাজনীতি

ঈদ-রোজা কাজে লাগিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা

আগামী ৮ মে থেকে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে মাঠে সক্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করলেও তৃণমূলে চলছে দেদারসে। রমজান মাস ও ঈদ সামনে রেখে এলাকায় নেতাদের পদচারণায় জমে উঠেছে উপজেলাকেন্দ্রিক রাজনীতি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এখন অংশ নিচ্ছেন সব অনুষ্ঠানে। প্রতিদিন সকালে বাজারে বাজারে চলছে গণসংযোগ। বিকেলে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠন-গোষ্ঠীর ইফতার মাহফিলে। এভাবেই সময় কাটছে প্রার্থীদের। অনেকে পুরো রমজান এমনকি ঈদ পর্যন্ত এলাকার কার্যক্রম ঘিরে ছক এঁকেছেন। ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদসামগ্রী বিতরণ, রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানান উপলক্ষে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সবমিলিয়ে ভোটের আগের এই উৎসবকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চান প্রার্থীরা। একটু সুযোগ বা সময় হাতছাড়া করতেও নারাজ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান রনি। সকাল-বিকেল বিভিন্ন বাজারে গণসংযোগ করছেন, যাচ্ছেন মসজিদ-মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইফতারে কখনো ধনবাড়ী শিক্ষার্থী সংসদ ঢাকা, আবার কখনো পেশাজীবী সংগঠনে, আবার তরুণদের নিয়ে মাঠে গণইফতারে অংশ নিচ্ছেন। মসজিদে নামাজ শেষে গোল হয়ে বৈঠক করছেন, আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠকেও যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিনই ইফতার পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা/ ছবি- জাগো নিউজ

জাগো নিউজকে মেহেদী হাসান রনি বলেন, ‘পুরোনো বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আমি মাঠে নেমেছি। মানুষকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে সচেতন করছি। পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেবো, সেজন্য দোয়া চাইছি। আমি চাই মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুক। ক্ষমতা দখল করে থাকা লুটেরাদের বিদায় দিক।’

ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদে মেহেদী হাসান রনি ছাড়াও গণসংযোগ করছেন আরও বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুনার রশিদ হিরা এবং ধনবাড়ী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম তপন।

আরও পড়ুন

ভোটার ফেরাতে দলীয় প্রতীকবিহীন ভোট, সাফল্য কতটা? দলীয় প্রতীকবিহীন স্থানীয় নির্বাচনে দ্বিধাবিভক্ত আ’লীগের তৃণমূল ‘নৌকা ছাড়াই’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আইনে যা আছে

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এন এম মইনুল ইসলামও সক্রিয় এলাকায়। নিজ সম্রাজ্য দখলে রাখতে ইউনিয়নে ইউনিয়নে ইফতার, গ্রামগঞ্জে মতবিনিময় সভা, কুলখানি-মিলাদ মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন ওয়াজ মাহফিলে, মন্দিরে সম্প্রীতি সম্মিলন, বাড়ি বাড়ি উঠান বৈঠক এবং হাটবাজারে গণসংযোগ করছেন দেদারসে।

পুরোনো বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছি। মানুষকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে সচেতন করছি। পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেবো, সেজন্য দোয়া চাইছি। আমি চাই মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুক। ক্ষমতা দখল করে থাকা লুটেরাদের বিদায় দিক।

জাগো নিউজকে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর সহচর মরহুম আব্দুল হাকিম এ এলাকার এমপি ছিলেন। বাবার দেখানো পথেই গত ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছি। মানুষের সুখ-দুঃখ শুনছি, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। রাজাকার পরিবার থেকে এখানকার রাজনীতি নিয়ে এসেছি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে। মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করেছি। আশা করছি এই ঐক্যেই জনতার বিজয় হবে, আমাকে তারা ফের নির্বাচিত করবেন।’

বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করতে মাঠে সক্রিয় আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক কামাল হোসেনও। এর বাইরে দুই বারের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল হোসেন এবং যুবলীগ নেতা সোহেল সামাদও প্রার্থী হতে পারেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে সক্রিয় সাবেক ছাত্রনেতা সাগর হোসেন সোহাগ। এরই মধ্যে তিনি রমজানে বিভিন্ন ইফতার মাহফিল, উঠান বৈঠক ও নানান জায়গায় গণসংযোগ করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চার ধাপের এই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে বেশ সাড়া পড়েছে। নেতাকর্মীরাও সক্রিয়। দল ও দলের বাইরে সবাইকে এক করে মাঠে আনার প্রচষ্টা যেমন প্রার্থীদের, তেমনই দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররাও চান ভালো লোক আসুক নেতৃত্বে।

জাগো নিউজকে সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, ‘আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছিলাম। এখন চাচ্ছি এলাকার মানুষের পাশে থাকতে। তাদের সুখে-দুঃখে সঙ্গী হতে। এজন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে দোয়া চাইছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাকে একজন তরুণ প্রার্থী হিসেবে সাদরে গ্রহণ করছেন। আশা করি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারুণ্যকে এগিয়ে নিতে প্রবীণদের সঙ্গে নিয়ে স্মার্ট সদর উপজেলা গড়তে বদ্ধপরিকর থাকবো ইনশাআল্লাহ। ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে সদা প্রস্তুত থাকবো। সবমিলিয়ে উপজেলা পরিষদকে ভোটারদের আস্থার জায়গায় রূপান্তরে সবসময় সচেষ্ট থাকবো।’

আরও পড়ুন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক না থাকা ভালো সিদ্ধান্ত দলীয় প্রতীক না থাকলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তিন মত বিএনপিতে 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে আরও আছেন সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও ঝিনাইদহ সদর থানা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল ইসলাম এনাম।

একই সময়ে উপজেলা নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের জন্য হয়তো একটা সুযোগ হয়েছে আরও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার। সে সুযোগটাই তারা কাজে লাগাচ্ছেন, এটা ইতিবাচক। গ্রামীণ রাজনীতির পাশপাশি অর্থনীতিও সচল এবং সক্রিয় হবে।

একই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গণসংযোগ করছেন যুবলীগ নেতা নুর এ আলম বিপ্লব, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জে এম রশিদুল আলম রশিদ, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম, ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রশীদুর রহমান রাসেল ও ঝিনাইদহ সদর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম সারওয়ার সউদ।

ধনবাড়ী, বরুড়া ও ঝিনাইদহ সদরের মতো সারাদেশেও একই চিত্র। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন এলাকা। রমজানকে ঘিরে ইফতার মাহফিলসহ নানান অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সাধ্যমতো ঈদ উপহার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণের পরিকল্পনা করছেন। অনেকে সরাসরি নির্বাচনী মতবিনিময় সভা বা নির্বাচন উপলক্ষে বর্ধিত সভাও করছেন।

নামাজ শেষে মসজিদে বৈঠক করছেন প্রার্থীরা/ ছবি- জাগো নিউজ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চার ধাপের এই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে বেশ সাড়া পড়েছে। নেতাকর্মীরাও সক্রিয়। দল ও দলের বাইরে সবাইকে এক করে মাঠে আনার প্রচষ্টা যেমন প্রার্থীদের, তেমনই দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররাও চান ভালো লোক আসুক নেতৃত্বে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার নেতারা সবসময় মানুষের পাশে থাকে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে সেটি আরও বেশি করে হয়। এবার ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি সময়ে পড়েছে। এ সময়ে মানুষ এমনিতেই গ্রামে যায়। আমাদের নেতাকর্মীরাও গ্রামমুখী হন। একই সময়ে উপজেলা নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের জন্য হয়তো একটা সুযোগ হয়েছে আরও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার। সে সুযোগটাই তারা কাজে লাগাচ্ছেন, এটা ইতিবাচক। গ্রামীণ রাজনীতির পাশপাশি অর্থনীতিও সচল এবং সক্রিয় হবে।’

এসইউজে/কেএসআর/জেআইএম