অর্থনীতি

শুরুতেই ক্রেতাশূন্য শতাধিক প্রতিষ্ঠান, সূচকের বড় পতন

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়া-কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের (দাম বাড়া বা কমার সর্বোচ্চ সীমা) নতুন নিয়ম চালু করার পর বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।

Advertisement

দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ এলেও ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হচ্ছে। এতে শুরুতেই সূচকের বড় পতন হয়েছে।

প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৭০ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তুলনায় কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

Advertisement

এর আগে শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকাতে গতকাল সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন এনে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ থেকে সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ জুন শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের যে যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয় তা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে দাম কমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হবে ৩ শতাংশ। ফ্লোর প্রাইজে থাকা সিকিউরিটিজ বাদে সব সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে।

বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। তবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারের উপকার হবে না। বরং বাজারে স্বাভাবিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটবে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। মার্কেট এক জায়গায় গিয়ে ঠিক হয়ে যেতো। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আগের নিয়ম রাখা হয়েছে, কিন্তু কমার ক্ষেত্রে কমতে পারবে না, এটা আগের মতো আরও একটা ভুল সিদ্ধান্ত।

Advertisement

তিনি বলেন, বিএসইসি সূচক নিয়ে এতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে কেন? তাদের উচিত বাজারে যে অনিয়ম হয় তা দেখা। সেই সঙ্গে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বসে বিনিয়োগকারীদের সিস্টেমে কিছু প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তার ব্যবস্থা করা। এটার জন্য চেষ্টা-তদবির করা উচিত।

অধ্যাপক আবু আহমেদ আরও বলেন, দাম কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের যে নিয়ম করে দেওয়া হলো এটা বাজারের কোনো উপকার করবে না। ক্ষতিই করবে। বাজারে ফ্রি ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এতো সমালোচনার পর ফ্লোর প্রাইজ উঠিয়েছে, তারপর আবার সেই দিকে যায়। পড়াটাকে জোর করে বেঁধে রাখা যায় না। যেটা পড়ার সেটা পড়বেই।

সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার পর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হতেই বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির বড় ধরনের চাপ আসে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সেই প্রবণতা। ফলে আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচকের বড় পতন হয়।

লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন মাত্রা বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১০টা ৫০ মিনিটে ডিএসইতে মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩৫টির। আর ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৮১ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমেছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৪ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭টির, কমেছে ১০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির।

এমএএস/জেডএইচ/এএসএম