দেশজুড়ে

মানিকগঞ্জে বহিষ্কারের পরও মাঠে থাকছেন বিএনপির ৪ প্রার্থী

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট হচ্ছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলায়। এ দুটি উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন চার বিএনপি নেতা। এরইমধ্যে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হলেও মাঠ ছাড়তে নারাজ তারা।

এ নিয়ে দলে অসন্তোষ থাকলেও প্রার্থীরা বলছেন, কেন্দ্র নয় তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় চাওয়াকে। দলের নির্বাচন বর্জনের নির্দেশনা বিলম্বে এসেছে বলেও অভিযোগ তাদের।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার। বয়সে তরুণ এই নেতা বয়ড়া ইউনিয়নে তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

একই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে লড়ছেন মোশারফ হোসেন মুসা। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য।

সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন নির্বাচন করছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিংগাইর উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা রহমান লিপি।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) তাদের দল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই চারজনসহ বরখাস্তের তালিকায় আছেন সারাদেশের ৭৩ জন নেতাকর্মী।

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, ‘আমি বয়রা ইউনিয়ন পরিষদে তিনবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক আগে থেকেই আমার একটা স্বপ্ন ছিল উপজেলা নির্বাচন করবো। যখন তফসিল হয়েছে তখন সুনির্দিষ্টভাবে বুঝতে পারিনি দল ইলেকশন করবে না। আমি আসলে নির্বাচনের মাঠে নেমে গেছি। গণসংযোগ শুরু করেছি। পরে ১৪ এপ্রিল দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলাম নির্বাচন করবে না।’

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে, ভালো জানে। সেটা দলমত নির্বিশেষে। জেলা বিএনপির নেতারা আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে মানুষের মধ্যে আমার আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আমার লাইফ জনগণের কাছ থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই নির্বাচন থেকে সরে গেলে আমাকে একটা কলঙ্ক নিয়ে যেতে হবে। মানুষের মনে নানান কথা রটবে, যে আমি টাকা খেয়ে বসে গেছি। লিয়াজো করে বসে গেছি। ফলে ভবিষ্যতে আমার ডাকে কেউ সাড়া দেবে না। এজন্যই আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ইলেকশন করছি।

সিংগাইর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হওয়ার পর মার্কা দেওয়ার আগ মুহূর্তে দল সিদ্ধান্ত দেয় তারা নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু আমরাতো জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি, প্রচারণা চালিয়েছি। তারা আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছে। তারা অনেক দিন ধরে ভোট দিতে পারেন না। তারা চান উপজেলা নির্বাচনে যেহতু দলীয় প্রতীক নাই তাই বিএনপিপন্থীরা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলে পাস করা সম্ভব। যেহতু চেয়ারম্যান পদে কেউ প্রার্থী হলেন না তাই ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমি প্রার্থী হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দল বহিষ্কার করলেও এখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। জনগণের দাবিকেই গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আামার বিজয়ও সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ কবির জিন্নাহ জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ার পর তাদের ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই সিদ্ধান্তও মানেননি। এ কারণে দল প্রথমে তাদের শোকজ এবং পরবর্তীতে স্থায়ী বরখাস্ত করেছে। তারা এখন দলের কেউ নন। দলের কোনো নেতাকর্মী তাদের পাশে নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন প্রার্থী। হরিরামপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে মোট প্রার্থী ২৬ জন। এ দুটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস