দেশজুড়ে

অসুস্থ বাবাকে দেখতে চাওয়ায় স্বামীর হাতে লাশ হতে হলো বিথিকে

অশীতিপর মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে দেখতে বাপের বাড়ি যেতে চাওয়ায় স্বামীর হাতে খুন হলেন বিথি বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ। অবশেষে বাপের বাড়িতে এলেও জীবিত নয়, লাশ হয়ে এলেন তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী পলাতক রয়েছেন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ওই গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাবার বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিথি বেগম উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের রতন সেখের মেয়ে।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে একই উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের তামারহাজি গ্রামের নজির সেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সেখের সঙ্গে বিথি বেগমের বিয়ে হয়। বিথির অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুপথযাত্রী। এ খবর পেয়ে বাবাকে দেখতে বাপের বাড়ি আসতে চান তিনি। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামী সাখাওয়াত হোসেন এতে বাধ সাধেন। এ নিয়ে বিথি বেগম জেদ ধরলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান পাষাণ স্বামী। এ সময় বিথি বেগমের তলপেটে লাথির আঘাতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ঘটে ও তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

পরে তাকে মৃত ভেবে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ঘরে থাকা কীটনাশক স্ত্রীর মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার বলে চালানোর চেষ্টা করেন বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিথি বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে তার মৃত্যু হয়।

গৃহবধূর চাচাতো ভাই সজল সেখ জানান, চাকরির সুবাদে আমি ফরিদপুরে অবস্থান করি। আমার ছোট ভাই ফোন করে জানায়, বিথিকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি মেডিকেলে ছুটে যাই, তখনও তারা পৌঁছায়নি। তারা পৌঁছানোর পরই আমি বোনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় আমার বোনজামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়রা পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও বিষের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার রাতে আমার বোনের মৃত্যু হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

নিহত গৃহবধূর মা দোলেনা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

বোন নাজমা বেগম জানান, ৯ ভাই-বোনের মধ্যে বিথি ছোট। আমার একমাত্র ভাই প্রতিবন্ধী। বিথিকে তার স্বামী সাখাওয়াত প্রায়ই নির্যাতন করতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ফোনে কান্নাকাটি করতো। এর আগেও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমার বোন বিষপান করতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে এটাই তার প্রমাণ।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা জানান, মরদেহের সুরতহাল করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক রহস্য জানা যাবে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এন কে বি নয়ন/এফএ/জিকেএস