গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় রাজউকের শিল্প জোনের একটি প্লট দখল করে মসজিদ ও মার্কেট নির্মাণ করে বছরের পর বছর দখল করে রাখে একটি চক্র। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ মে ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সমস্ত স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উচ্ছেদের পরও দখলকারী চক্রটি ফের ওই জমি দখলের পায়তারা করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ষাটের দশকের শুরুতে তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বর্তমানে ডিআইটির (রাজউক) আওতাধীন টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের (শিল্প জোনের) জন্য টঙ্গীর আউচপাড়া মৌজার সৈলারগাতী ও হিমারদিঘী এলাকায় আরএস খতিয়ান- ১৬, ০৩ ও ১১ আর.এস- ১১২৮, ৩৩, ও ০১নং দাগে পুরান প্লট নং ৮৬, নতুন প্লট নং ৪০ যার জমির পরিমাণ ৭ বিঘা ১৭ কাঠা আধা ছটাকসহ আশপাশের জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া আলোচিত ওই শিল্প প্লটের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগেরও জমি রয়েছে।
কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের প্যানেল আইনজীবী আরিফুজ্জানান জানান, সরকারি দু’টি সংস্থার নামে জমি অধিগ্রহণের পর ওই এলাকায় ব্যক্তি মালিকানা কোনো জমি অবশিষ্ট নেই। এছাড়া ওই শিল্প জোনে প্রত্যেকটি প্লটের চারপাশে সুপরিসর জায়গা খালি রেখে প্লটগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে। এলাকার ভারী শিল্প কারখানাগুলোর পরিবহন পার্কিং করার সুবিধার্থেই প্লটগুলোর সামনে পর্যাপ্ত জায়গা খালি রাখা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মহল ওই জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
স্থানীয় হারুন অর রশিদ জানান, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একসময় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। যখনই যে দল ক্ষমতায় যেত ওই দলের লোকজন এসব খালি জায়গা পুনরায় দখল করে নিত। বর্তমানে একই দল একটানা ক্ষমতায় থাকার সুবাধে কিছু সুবিধাবাদী লোক সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে এসব জায়গা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দখলে রেখেছিল। রাজউকের সি ব্লকের ৮৬ (নতুন ৪০) নং প্লটের সামনে সংসদ উদ্দিন মার্কেট ইতোপূর্বে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
সর্বশেষ সেখানে মসজিদ করার নামে জায়গাটি অভিনব কায়দায় দখল করা হয়। কোটি কোটি টাকা মূল্যের ওই সম্পত্তির কিছু অংশে প্রথমে মসজিদের নামে টিনের ছাপড়া দিয়ে পাশের বাকি সব খালি জায়গায় একই নামে (সংসদ উদ্দিন) মার্কেট বানিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে একটি মহল। এছাড়া দোকান বরাদ্দ বাবদ মোটা অংকের অগ্রীম টাকাও নেওয়া হয়। মার্কেটটির পুনরায় উচ্ছেদ ঠেকাতে ছাপড়া মসজিদটি ভেঙে পাকা মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করে দখলকারীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার (২ মে) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেন। এ সময় দখলকারী পক্ষের কোনো লোকজনকে জমির ধারে কাছেও আসতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকামুখি এ অংশের জায়গাটি দীর্ঘ বছর যাবত বেদখল ছিল। মহাসড়কের পাশে ফুটপাত ছিল না। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পর জনদুর্ভোগ লাঘবে অনেক সহায়ক হবে। দখলকারীরা জায়গাটি স্থায়ীভাবে দখলের উদ্দেশ্যে একটি বহুতল মসজিদ নির্মাণ করেছিল। ওই চক্রটি ফের জমিটিতে স্থাপনা নির্মাণ ও দখল করার কথা বিভিন্ন জনের কাছে শোনা যাচ্ছে। তাই এই জমিটি যেন ফের দখল না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, তার দাদাশ্বশুর সংসদ উদ্দিন এসএ ও সিএস পর্চামূলে এই জমির মালিক ছিলেন। পরবর্তীতে আরএস জরিপে সড়ক ও জনপথ এবং ডিআইটির (রাজউক) নামে ভুলবশত এসব জমি রেকর্ড হয়। তবে ওই দাগ থেকে ডিআইটি ও সওজ কতটুকু জমি হুকুম দখল করেছে এবং এরপর আরো কোনো জমি অবশিষ্ট আছে কিনা তা জানাতে পারেননি তিনি।
অধিগ্রহণের ফাইল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ ব্যাপারে কোনো তথ্যও তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান। তবে তারা রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে দেওয়ানী মোকাদ্দমা নং ২০/২৩ দায়ের করেছেন বলে জাগো নিউজকে বলেছেন।
টঙ্গী সড়ক উপবিভাগের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন খান বলেন, সরকারি জমিতে একটি মসজিদসহ অন্তত ৫০টি অবৈধ দোকানপাট ছিল যা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সওজের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল লতিফ খান বলেন, সওজের এই অংশের জমিটি দীর্ঘদিন যাবত বেদখল ছিল। দখলদাররা জমিটিতে পাকা মসজিদ নির্মাণ করছিল। জমিটি ছেড়ে দিতে আগে তাদের নোটিশ করে সওজ। তারপরও দখলকারীরা জমির দখল না ছাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে সকল স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম