দেশজুড়ে

কোটি টাকার শুকনা মরিচ বিক্রি হয় যে হাটে

কোটি টাকার শুকনা মরিচ বিক্রি হয় যে হাটে

ভোর থেকেই হাটে আসতে থাকে লাল টুকটুকে মরিচ। নৌকা আর ঘোড়ার গাড়িতে করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতা ও বিক্রেতার ব্যস্ততা।

Advertisement

গাইবান্ধার ফুলছড়ির শুকনা মরিচের হাটের চিত্র এমনই। এ উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ায় জেলার একমাত্র হাট বসে এখানেই।

সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুদিন ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকার ওপরে। ‘ফুলছড়ি মরিচ হাট’ নামে পরিচিত হাটটি।

ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবিঘা মরিচ উৎপাদনে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। বিঘায় কাঁচা মরিচ ৫০ মণ হলে তা রোদে শুকিয়ে ৯-১০ মণ হয়। প্রতিমণ শুকনা মরিচ ১২-১৩ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।’

Advertisement

মরিচ বিক্রেতা গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক জোব্বার মিয়া বলেন, শুধু আমি না, চরের সব কৃষক এখানে শুকনা মরিচ বিক্রি করতে আসেন।

গাইবান্ধার শুকনা লাল মরিচের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। মরিচ চাষে চরাঞ্চলের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় মরিচের আকার বড় ও সুন্দর হয়। অন্যান্য মাটির তুলনায় চরের মাটিতে মরিচের ফলন দুই থেকে তিনগুণ বেশি হয়। জেলার ব্রাহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীবেষ্টিত চরগুলোতে শত শত বিঘা জমিতে মরিচের চাষ হয়। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলি মাটিতে দুই থেকে তিনটি চাষ দিয়ে মই দেওয়ার পর বীজ বোনা হয়। গাছ একটু বড় হলে ১৫-২০ দিন পরপর ২-৩ বার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয় মরিচের। উৎপাদনে খরচও অনেকটা কম।

বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে আসা সালেহ আকন্দ বলেন, এখানকার মরিচের মানটা অনেক ভালো। তবে দাম একটু বেশি। এই হাটে মরিচ কিনতে ভোরবেলায় ট্রাক নিয়ে এসেছি।

জয়পুরহাট থেকে মরিচ কিনতে আসা জুয়েল মিয়া বলেন, প্রতি হাটে ৩০-৪০ মণ করে মরিচ কিনি। পরে স্থানীয় কিছু হাটে পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়।

Advertisement

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরোনো উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০২ সাল থেকে বসছে এই মরিচের হাট। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য সময়ে বেচাবিক্রি কম হয়।

ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুদিন হাট বসে। প্রতি হাটে শুধু চরাঞ্চলের শুকনা লাল মরিচ-ই কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হয়।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ায় চরাঞ্চলে মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। তাঁরা মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শসহ সবধরনের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এসআর/এএসএম