ময়মনসিংহের ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনা নিহত হয়েছেন জায়েদা খাতুন (৩২) নামের এক নারী। এ ঘটনায় আহত তার শিশুসন্তান জাহিদ হাসান (১) এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে শিশুটির বাবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শিশুটিকে মামার জিম্মায় দিতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৩ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন জায়েদা ও তার শিশুসন্তান জাহিদ হাসান। পরে তাদের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেন স্থানীয়রা। সেখান থেকে ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে জায়েদার মৃত্যু হয়। শিশু জাহিদকে ওই হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে।
মায়ের মৃত্যুর পর শিশুটির কান্নার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। শনিবার (১১ মে) রাতে জায়েদার পরিচয় নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। পরের দিন বোনের মরদেহ ও ভাগনেকে নিতে আসেন রবিন মিয়া। তবে, শিশু জাহিদ হাসানের চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় শুধু জায়েদার মরদেহ তার ভাই রবিন মিয়ার কাছে হস্তান্তর করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
নিহত জায়েদা খাতুন সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার কুসিউড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি আইডিয়াল মোড় এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
আরও পড়ুন
চিকিৎসাধীন শিশু জিহাদকে মামার জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশজায়েদার মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাত গাড়ির বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেছেন ভরাডোবা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম।
নিহত জায়েদার বড় ভাই রবিন মিয়া জাগো নিউজকে জানান, জায়েদার একাধিক বিয়ে হয়েছে। ভালুকা এলাকায় থেকে কখনো গার্মেন্টেস, কখনো জুতা কারখানায় কাজ করে জীবন চালাতেন।
তারাকান্দায় প্রথম বিয়ের সংসারে তার তিনটি সন্তান রয়েছে। স্বামী নির্যাতন করায় ২০১৭ সালে তিনি তার বোনকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর কাজের সন্ধানে জায়েদা ভালুকায় যান। বাবার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কম। এরপর থেকে জায়েদার জীবনে কী ঘটেছে, কিছুই জানাতে পারেননি তার ভাই রবিন মিয়া। জাহিদ হাসানের বাবা কে তাও জানেন না তিনি।
নিহত জায়েদার দ্বিতীয় স্বামী ফারুক মিয়া। তিনি নরসিংদীর পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি নিজেও জায়েদাকেসহ দুটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিনটি ছেলেসন্তান রয়েছে।
ফারুক মিয়া বলেন, ‘আমি পেশায় একজন ট্রাকচালক। ৭-৮ আট বছর আগে জায়েদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করি। বিয়ে করার পর দেড় বছর সংসার হয়েছে আমাদের। তখন জায়েদা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। তার নাম রাখা হয় ফারিয়া আক্তার। বর্তমানে ফারিয়ার বয়স পাঁচ বছর। ফারিয়ার জন্মের আনুমানিক ৫-৬ মাস আগে পরে একদিন আমি গাড়ি চালাতে চলে যাই। ২-৩ দিন পর বাড়িতে ফিরে দেখি সে ফারিয়াকে ফেলে অন্য আরেক ছেলের সঙ্গে চলে গেছে। এরপর সে আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। এরপর আবারও আরেক ছেলের হাত ধরে চলে যায়। তবে, তাদের কারোর পরিচয় আমার জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনার পৌনে দুই মাস আগে জায়েদা তার শিশু জাহিদকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। এসে বলেছিল, তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার কাছে কিছু টাকাও চেয়েছিল। কিন্তু, তাকে আশ্রয় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’
ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু ও শিশুটি আহত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে এমনটিই জানা গেছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা মনে হলেও জায়েদার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার চেষ্টা চলছে। যারা হাসপাতালে রেখে গেছেন, তাদের পরিচয় লেখা নেই। তারা কারা সেটিও খুঁজে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সুরতহালে জায়েদার মাথা ও পায়ে আঘাত পাওয়া গেছে। সোমবার আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, শুনেছি আদালত ছেলের মামার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে, আমরা লিখিত কোনো কাগজ পাইনি। সুস্থ না পর্যন্ত শিশু জাহিদ হাসানের চিকিৎসা এ হাসপাতালেই চলবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/এমএস