জাতীয়

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ফের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব

শুরুতে ব্যয় ছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আরও ৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা প্রকল্পের মেয়াদও বাড়তে পারে আরও তিন বছর ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ‘অত্যধিক’ বলছে পরিকল্পনা কমিশন

ডলারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমছে টাকার মান। এর প্রভাব পড়ছে সব খাতে। বাড়ছে সরকারের উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্পের ব্যয়। পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে কিছু প্রকল্প সংশোধন করছে সরকার। কিছু প্রকল্পের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আবার ডলারের দাম বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলছে।

Advertisement

দেশের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’। এটি সরকারের একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ প্রকল্পে এক ধাপে ৬ হাজার ৮৪১ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদও আরও তিন বছর বাড়াতে চায় মন্ত্রণালয় ।

এ প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে প্রকল্পটির সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ৬ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে কমিশন। সভায় প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ‘অত্যধিক’ দাবি করে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে ওই পিইসি সভা হয়।

Advertisement

ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রশ্নবিদ্ধ কমিশনদ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে মোট ৬ হাজার ৮৪১ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে; যা কমিশনের কাছে অত্যধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়। ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবসহ প্রকল্প সংশোধনের কারণ জানতে চায় কমিশন। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হয়। স্টাডির ভিত্তিতেই করা হয় প্রকল্পের ড্রয়িং, ডিজাইন ও ব্যয় প্রাক্কলন। কিন্তু এরপরও এত বেশি ভেরিয়েশনের বিষয়টি ‘কাঙ্ক্ষিত নয়’ বলে ড. এমদাদ উল্লাহ উষ্মা প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে প্রণীত ফিজিবিলিটি স্টাডিরও পুনর্মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা

ওই পিইসি সভা থেকে বলা হয়, রাজস্ব ও মূলধনী খাতের যেসব আইটেমের ব্যয় কমানো সম্ভব সেগুলোর ব্যয় কমানো যেতে পারে। রাজস্ব ও মূলধনী খাতের সব অঙ্গের ব্যয় পুনরায় পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

Advertisement

আঞ্চলিক হাব হবে মাতারবাড়ি, বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের পরিচালনা কার্যক্রম চালু হবে বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বিদেশে যাচ্ছি, এয়ারপোর্টে আছি। এখন কথা বলা যাবে না।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি সব প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু অনেক প্রকল্পে সঠিকভাবে এটি করা হচ্ছে না। ফলে অধিক হারে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পেরও সময়-ব্যয় বাড়ছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা কিছু কোয়ারি দিয়েছি। এগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। আমরা সবাই বসেই কিন্তু পিইসি সভার সিদ্ধান্ত ঠিক করি। এখানে পরিকল্পনা কমিশন একা নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিরাও থাকেন। প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া কিছু খাতের ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতেও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের আইটেমগুলোর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে বন্দর নির্মাণ অংশে সামগ্রিকভাবে সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি থেকে দুই হাজার ৫১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হলেও প্রকল্পের প্যাকেজগুলোর প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয় ২০২২ সালের জুন মাসে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রকল্প অনুমোদনকালে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১ ডলার সমান ৮৫ টাকা। দরপত্র দাখিলের সময় (২৮ নভেম্বর ২০২২) মুদ্রা বিনিময় হার ছিল এক ডলার সমান ৯৮ টাকা। এতে দেখা যায় প্রাক্কলনের সময় থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান প্রায় ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ে। পরবর্তীকালে দরপত্র মূল্যায়নের সময় (২৭ আগস্ট ২০২৩) পর্যন্ত ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে প্রাক্কলনকালীন বিনিময় হার অপেক্ষা তা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়।

নতুন প্রস্তাবিত ব্যয়ের কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকায়। এ সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দরসেবা দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে

বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের জন্য টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর ব্যয় প্রায় এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, সিডি-ভ্যাট, পোর্ট চার্জ, ভূমি অধিগ্রহণ, কন্টিনজেন্সি ও পরামর্শক সেবাসহ রাজস্বের কয়েকটি খাতেও ব্যয় বেড়েছে।

মূল প্রকল্পে মোট ২৭ দশমিক ৫১৮ কিলোমিটার সড়ক ও সেতু নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে নকশা পরিবর্তন হলে সড়ক নির্মাণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার এবং সেতু নির্মাণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৬৭০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে সড়কের পরিমাণ কমলেও সেতুর পরিমাণ ৩ দশমিক ৬২ কিলোমিটার বেড়ে যায়। কাজের স্কোপ অব ওয়ার্ক পরিবর্তনের ফলে সড়ক ও জনপথ অংশে ব্যয়ও বাড়ে।

মূল ডিপিপি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রেট শিডিউল-২০১৮ অনুসরণে প্রণয়ন করা হলেও প্রস্তাবিত প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হালনাগাদ রেট শিডিউল-২০২২ অনুসরণপূর্বক প্রণয়ন করায় পূর্ত কাজের ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকা অ্যাকসেসিবিলিটি উইথ হাই ডিফিকাল্টি জোনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে প্রতিটি আইটেমের রেটের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ মূল্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে যা বলা হচ্ছেবাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় এ ব্যয় বেড়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ৪৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, স্কোপ অব ওয়ার্ক পরিবর্তনের জন্য ৬৭৪ কোটি ৬৪ লাখ, হালনাগাদ রেট শিডিউলের জন্য ১ হাজার ৯১৪ কোটি ১৬ লাখ এবং অ্যাকসেসিবিলিটি উইথ হাই ডিফিকাল্টি জোনের জন্য ৯০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, জাইকার অনুমোদন বা অনাপত্তি দিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় এক বছর অতিরিক্ত সময় নেওয়া হয়। বিডারদের প্রস্তাবিত মূল্য প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় জাইকার পরামর্শে প্রাইস নেগোসিয়েশনের অতিরিক্ত সাড়ে চার মাস প্রয়োজন হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে ভৌত ও বাস্তব কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে প্রকল্পের বন্দর অংশের প্যাকেজ-১ এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে চুক্তির মেয়াদ ৪২ মাস নির্ধারিত। চলতি বছরের আগামী জুন-জুলাই মাসে সম্ভাব্য চুক্তি সম্পাদন করা যাবে। ফলে ৪২ মাসের কার্যাদেশ অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২৭ সালে কাজ সমাপ্ত হবে এবং পরবর্তীসময়ে আরও এক ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড নির্ধারিত আছে। সে লক্ষ্যে প্যাকেজ-১ এর কার্যক্রম সমাপ্ত করতে ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন, জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সওজ অধিদপ্তর জানায়, সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী সড়ক ও সেতু নির্মাণের একটি প্যাকেজের রিটেন্ডারের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে নতুনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৮ এর পরিবর্তে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত নির্ধারণ করা প্রয়োজন। পুরো প্রকল্পটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে বাস্তবায়ন মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকটি ফেজে প্রকল্পের কাজ চলমান। মাতারবাড়ীর মূল বন্দরের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে। আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। তবে অন্য ফেজের কাজে কিছুটা সময় লাগবে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও রেট শিডিউলের কারণে ব্যয় বাড়বে। সঠিক সময়ে ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেননি। এজন্য ডিপিপি সংশোধন হবে।

আরও পড়ুন

মাতারবাড়ি বন্দরসহ চার প্রকল্পে ১০৩৯ কোটি টাকা দেবে সরকার ভূ-রাজনীতির বাস্তবতায় সাহসী পদক্ষেপ ‘মাতারবাড়ী’ মাতারবাড়ী ‘গভীর সমুদ্রবন্দরে’ ভিড়ল প্রথম জাহাজ

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বৈদেশিক ঋণসহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পরবর্তীকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পের প্রথম সংশোধনের প্রশাসনিক আদেশ জারি করে। বর্তমানে প্রকল্পের কয়েকটি খাতের পরিমাণ ও ব্যয় পরিবর্তন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার মধ্যে জিওবি তিন হাজার ৫৬৯ কোটি ৮২ লাখ, জাইকার ঋণ ১৮ হাজার ১৬১ কোটি ৯৪ লাখ এবং সংস্থাটির নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে দুই হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

যা থাকছে প্রকল্পের আওতায়বড় আকারের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত ব্যয়ের কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকায়। এ সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দরসেবা দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টার্মিনাল থাকবে। এর একটি হবে বহুমুখী টার্মিনাল ও অন্যটি কনটেইনার টার্মিনাল। এছাড়া, বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে ৮ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে।

প্রকল্পের মধ্যে অন্য কাজের সঙ্গে প্রায় ২৮ কিলোমিটার চার লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মিত হবে। এ সড়কে ১৭টি সেতু থাকবে। ১৭টি সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়িত হলে ১৯ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) বন্দরে ভিড়তে পারবে। আর তখন দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে বন্দরটি বিরাট ভূমিকা রাখবে।

এমওএস/এমকেআর/এমএস