অর্থনীতি

অসহায় এনবিআরকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিন: দেবপ্রিয়

কর আদায়ে ন্যায্যতা বজায় রাখতে অসহায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজনৈতিক সুরক্ষা ও সবধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

Advertisement

রোববার (১৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন: পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক এক ডায়ালগে এ আহ্বান জানান দেবপ্রিয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় আয়োজিত ডায়ালগে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

দেবপ্রিয় বলেন, ‌‘যারা কর দেয় না, দেশের টাকা পাচার করে তারা রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িকভাবে অনেক শক্তিশালী। কর আদায়ে ন্যায্য্যতা দরকার। এখানে আর্থিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান না হলে অসহায় এনবিআর কর আহরণে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এনবিআরকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে। এ সুরক্ষা দিয়ে এনবিআরের প্রতি দৃশ্যমান সমর্থনকে প্রকাশ করতে হবে।

কর আদায়ে ন্যায্যতা প্রসঙ্গে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অনেক সময় একই রকম আয় করছে কিন্তু কর দিচ্ছে ভিন্ন রকম। অনেক আয়ই বাংলাদেশে পবিত্র আয় না। অপবিত্র আয়কে কীভাবে ন্যায্য করের আওতায় আনবেন। এটার জন্য অনেক সময় কালো টাকা সাদা করার মতো বিকৃত প্রক্রিয়া চালু হয়। সংস্কার যদি শুধু কর আহরণের জন্য হয়, অন্য ক্ষেত্রে না হয় তাহলে কিছু হবে না। যেসব দেশে সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা থাকে সেসব দেশের করদাতারা কর দিতে ইচ্ছুক থাকে। যে ডিজিটাইজেশন আমরা আহরণে করছি, সরকারি আয়ে যদি সেটা না রাখি তাহলে এটা ফলাফল দেবে না।

Advertisement

ডায়ালগে বিজিএমইএ নেতা শামস মাহমুদ বলেন, এইচএস কোডে প্রতিদিন সমস্যা হচ্ছে। হয়রানি করে আন্ডার হ্যান্ড ডিলিং করা হয়। টাকাটা যাচ্ছে কিন্তু টাকাটা সরকার পাচ্ছে না। যারা কর দিচ্ছে তাদের যেন চেপে ধরা না হয়।

সাবেক এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ডিজিটালাইজেশন করতে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য এনবিআরের সামগ্রিক পরিকল্পনা কাজ করেনি। ইন্টিগ্রেটেড আইটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান আমাদের জরুরি। এখানে ক্যারিয়ার অরিয়েন্টেড আইটি পিপল লাগবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এখন অটোমেশন নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু সারা বিশ্ব অটোমেশন থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে চলে গেছে।

ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল বলেন, এনবিআরকে ডাটা পলিসি ও ডাটা প্রটেকশনের নিজস্ব নিয়ম চালু করা দরকার।

Advertisement

এনবিআরের সাবেক আইনজীবি আব্দুল মজিদ বলেন, এনবিআরে ডিজিটালাইজেশন ৯০ সাল থেকে হচ্ছে। কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি।

ট্যাক্স আইনজীবী রিজওয়ানা তাবাসসুম বলেন, ই-রিটার্ন অনেক বেশি দিয়েছে। কিন্তু ই-রিটার্ন ব্যবহারে মোটিভেশন করতে হবে। বিআইএন যখন করি তখন আমাকে টেবিলে টেবিলে দৌড়াতে হয়। কিছু দিতে হবে, না হলে হয়তো হবে না। এ জন্য আইনজীবীর কাছে মানুষ আসে। বিআইএন ডিজিটালি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না।

মূলপ্রবন্ধে মোস্তাফিজুর বলেন, শতভাগ ই-ফাইলিং নিশ্চিত করতে পারলে কর আহরণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাঁচ শতাংশ বাড়বে।

ডায়ালগের শুরুতেই সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের চলমান উন্নয়ন ধরে রাখতে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগের চাহিদা বাড়লেও এর সঙ্গে সংগতি রেখে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন বা কর আহরণ বাড়ছে না।

অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম উপস্থিত ছিলেন।

এসএম/এমএএইচ/