দেশজুড়ে

নির্বিষ ‘কাল নাগিনী’র জীবন বাঁচালেন যুবক

সাপ! কথাটি শুনলেই আমাদের শরীর হিম হয়ে আসে। প্রাণীটিকে দেখামাত্রই মেরে ফেলার চেষ্টা করেন বেশিরভাগ মানুষ। অথচ আমাদের দেশের ৯০ প্রজাতির সাপের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই নির্বিষ। যা অনেকের অজানা। তাই অনেকে ভুলে নির্বিষ সাপও মেরে ফেলেন।

Advertisement

তবে ব্যতিক্রম আছেন কেউ কেউ। যারা নির্বিষ সাপের বিষয়ে জানেন এবং তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এমনই এক যুবকের প্রচেষ্টায় প্রাণে বাঁচলো ‘কাল নাগিনী’ নামের একটি নির্বিষ সাপ।

ওই যুবকের নাম রিফাত আল আসাদ (২৯)। বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের কনেশ্বর এলাকায়।

রোববার (১৬ জুন) সকালে একই এলাকার বোরহান নামের এক যুবক একটি সাপ উদ্ধার করেন। সাপের মাথাটি দেখতে লম্বা ও চ্যাপ্টা। মুখের সামনের দিকটা চৌকোনা আকৃতির। গায়ের রং হালকা সবুজ ও কালচে ডোরাযুক্ত। ঘাড় থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মেরুদণ্ড বরাবর হলুদ ও কমলা রঙের গোল গোল দাগ। সাপটিকে স্থানীয়রা ‘কাল নাগিনী’ নামেই চেনেন। তবে এটি যে নির্বিষ তা জানতেন না বোরহান নামের ওই যুবক। তিনি সাপটিকে বিষধর ভেবে বোতলে বন্দি করে রাখেন।

Advertisement

বিষয়টি জানতে পেরে রিফাত সাপটিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। তবে বোরহান সাপটিকে না ছেড়ে অন্যদের হাত তুলে দেন। বিকেলে বোতলসহ ওই সাপটিকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলার সময় বিষয়টি দেখতে পান রিফাত। পরে তাদের বুঝিয়ে সাপটিকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে খোলা মাঠে সাপটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রিফাত আল আসাদ বলেন, “আমরা সাপ বিষয়ে অনেক কম ধারণা রাখি। আমরা মনে করি প্রায় সাপই বিষধর। যে কারণে সাপ দেখলেই মেরে ফেলি। এজন্যই মাঝেমধ্যে অনেক নির্বিষ সাপ মারা পড়ে। এমন একটি নির্বিষ সাপ ‘কাল নাগিনী’। এদের ছোবলে মানুষের মৃত্যু হয় না। তবে মানুষ না বুঝে সাপগুলোকে মেরে ফেলে। আমাদের এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বিষ সাপ পোকামাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। আমি মনে করি সবাইকে সাপ বিষয়ে জানতে হবে। যেগুলো বিষধর নয় সেগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোহানা বিলকিস বলেন, আমাদের দেশে ‘কাল নাগিনী’ হিসেবে পরিচিত সাপটিকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘অরনেট ফ্লায়িং স্নেক’। তবে এটি উড়তে পারে না। এরা সাধারণত গাছের ডগায় লতার সঙ্গে মিশে চলাচল করে। এই সাপের বিষ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী নয়। সাধারণত শিকারকে বশ করতে সাপগুলো বিষ প্রয়োগ করে।

Advertisement

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস