দেশজুড়ে

অস্বাভাবিক হারে কমেছে বেচাকেনা, কপাল পুড়ল কৃষকের

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কারফিউয়ের কারণে কপাল পুড়েছে পাবনার ঈশ্বদীর সবজি চাষিদের। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার অজুহাতে অস্বাভাবিক হারে কমেছে বেচাকেনা। এতে হু হু করে কমেছে সবজির দাম। ফলে বিপাকে পড়েন চাষিরা।

জানা গেছে, মাত্র ছয়দিনের ব্যবধানে ৫০ টাকা কেজি দরের ঢেঁড়শ মুলাডুলি আড়তে বেচাকেনা হয় ১৫ টাকায়। এছাড়াও চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, ঝিঙ্গেসহ বিভিন্ন সবজি পানির দরে বেচাকেনা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয়দিনে মুলাডুলি সবজি আড়ত বেচাকেনা তুলনামূলক অনেক কম ছিল। এ সবজি আড়ত থেকে কমপক্ষে ১৫ ট্রাক সবজি বোঝাই করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কারফিউ জারির পর সবজি আড়ত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫-৮টি ট্রাক শুধুমাত্র ঢাকায় চলাচল করছে। সবজি পরিবহনের জন্য গাড়ি ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গুনতে হয়েছে।

উপজেলার বাঘহাছলা গ্রামের ঢেঁড়শ চাষি এনামুল ইসলাম এলেন জাগো নিউজকে বলেন, গত ২১ জুলাই মুলাডুলি আড়তে ১৫ টাকা দরে ঢেঁড়শ বিক্রি করেছি। অথচ কমপ্লিট সার্টডাউনের আগের দিন ১৭ জুলাই এ আড়তে ঢেঁড়শ বিক্রি করেছি ৫০ টাকা কেজি দরে। মাত্র ছয়দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩৫ টাকা কমে যাওয়ায় হতবাক হয়েছি।

শেখপাড়া গ্রামের ঢেঁড়শ চাষি আলী হোসেন বলেন, সবজির বাজার সবসময় কমবেশি উঠানামা করে। কিন্তু এক-দুই দিনের ব্যবধানে ৫০ টাকা কেজির ঢেঁড়শ ১৪-১৫ টাকা হয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিকেজি ঢেঁড়শে উৎপাদন খরচ ২০ টাকার ওপরে। সেখানে ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে।

আটঘরিয়া গ্রামের সবজি চাষি সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় ঢেঁড়শ। এ সবজির বাজার মূল্য মোটামোটি ভালোই ছিল। কিন্তু গত ছয়দিনের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সবজির দাম কমে গেছে। এখন সবজি বেচাকেনা হচ্ছে পানির দরে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সাধারণ কৃষকের কপাল পুড়েছে।

মুলাডুলি আড়তের সবজি ব্যবসায়ী আলী আহসান বলেন, আড়তে ঈশ্বরদীসহ পাশ্র্ববর্তী তিন জেলার আট উপজেলার সবজি বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন কোটি টাকার সবজি এখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়। চাষিরা সবজির ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আড়তে তেমন আনছেন না। আবার চাষিদের সবজি মতো ব্যবসায়ীরা কিনে ঢাকা পাঠিয়েও স্বস্তি পাচ্ছি না। ঢাকার আড়তদাররাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সবজির ন্যায্য দাম দিচ্ছেন না।

মুলাডুলি সবজি আড়তের আড়তদার আমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুলাডুলি সবজি আড়তে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। প্রতিদিন এ আড়ত থেকে ১৫ ট্রাক সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যেত। গত ছয়দিনে মাত্র ৭-৮ ট্রাক করে সবজি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব সবজি পাঠানো সময় গাড়ি সংকট দেখা দেয়। অনেক চালক আন্দোলন ও কারফিউর কারণে ঢাকা যেতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে ৮-১০ হাজার টাকা বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।

এদিকে, মুলা, মিষ্টি কুমড়া ও চাল কুমড়া বেশি বেচাকেনা হয় উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী চরগড়গড়ি হাটে। পদ্মার চরে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া-চাল কুমড়া এ হাটে প্রচুর আমদানি হয়। গত ৫-৭ দিনে এ হাটে অস্বাভাবিক হারে কমেছে বেচাকেনা। এছাড়াও মিষ্টি কুমড়া ও চাল কুমড়ার দাম কমেছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

মিষ্টি কুমড়া চাষি আরশেদ আলী বলেন, ৭-৮ দিন আগেও তিন কেজি ওজনের একটি মিষ্টি কুমড়া ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন এসব মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। কয়েকদিনের প্রতিটি সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি পিস চাল কুমড়ার দাম কমেছে ১০-১৫ টাকা। যেটি আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন তা ১৫-২০ টাকা।

সবজিবাহী ট্রাক চালক আহাদ আলী বলেন, ছাত্র আন্দোলন ও কারফিউর মধ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাই। সড়কে প্রশাসনের লোকজন নানানভাবে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশী করে। এসময় সড়কে চলাচলে খরচ বেশি হয়। তাই ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়াও কমে যাবে।

ঈশ্বরদীর মুলাডুলি এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোমানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ঢেঁড়শসহ অন্যান্য সবজি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউর কারণে বাজারজাত করতে না পারায় দাম কমে গেছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দাম আবারও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জাগো নিউজকে জানান, কারফিউ জারির পর ট্রাক চলাচল করতে না পারায় ঢেঁড়শসহ অন্যান্য সবজির দাম কমে যায়। মঙ্গলবার থেকে ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে। সবজির দাম এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে।

শেখ মহসীন/এএইচ/জেআইএম