বিনোদন

ছোট্ট কিছু আক্ষেপ ছিল শাফিনের

জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিলেন শিল্পী শাফিন আহমেদ। কিন্তু ছোট্ট কিছু আক্ষেপ ছিল তার। জীবদ্দশায় সেসব নিয়ে প্রায়ই কথা বলতেন তিনি। তবে প্রত্যাশায় ভরা ছিল তার কণ্ঠ। সব সময় বলতেন, ‘আশা করি হবে’।

শেষ সাক্ষাৎকারে জীবন নিয়ে নিজের তৃপ্তির কথা তিনি সাংবাদিক রাসেল মাহমুদকে বলেছিলেন এভাবেই, ‘জীবন নিয়ে আমি অনেকখানি তৃপ্ত। যেহেতু আমি পরিকল্পনা করে সংগীত ভুবনে আসিনি। অনেক সংগীত পরিবারে দেখা যায়, ছোটকাল থেকে ট্রেনিং দেওয়া হয়। আমাদের ছিল ইচ্ছা ও ভালোলাগা। সেটা এই পর্যন্ত গড়াবে ভাবিনি। তাই বলব, প্রাপ্তির জায়গায় আমি তৃপ্ত, আর শ্রোতা ও ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞ।

জীবনজুড়ে অতৃপ্তির জায়গাটি খুবই ক্ষুদ্র শাফিন আহমেদের। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ যে কাজেই নিয়োজিত থাকুক না কেন, কিছু অপ্রাপ্তি তো তার থাকেই। জীবনে সবকিছু তো অর্জন করা যায় না। আমার আক্ষেপ, দেশে রয়্যালটির বণ্টন আরও আগে থেকে সঠিকভাবে হওয়া উচিত ছিল। উন্নত দেশে সিস্টেমটি খুবই সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়। এতে কেউ বঞ্চিত হয় না। শিল্পীর জীবন খুব সীমিত, কারণ তার ফিটনেসের ব্যাপার থাকে, অনেকটা স্পোর্টসম্যানদের মতো। সেই সময়ের মধ্যে অর্জনগুলোকে সিকিউর করে ফেলতে হয়।’

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন হয়েছে বেশ দেরিতে। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ ছিল শাফিন আহমেদের। কেননা তাদের জনপ্রিয় অ্যালবামগুলো থেকে সেই অর্থে যথাযথ রয়্যালটি পায়নি তার দল মাইলস। সে প্রসঙ্গে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমাদের কপিরাইট আইন হয়েছে সম্প্রতি। সেটা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। আমি ৯০-এর দশক থেকে কাজ করছি। “প্রত্যাশা” অ্যালবামটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রিত অ্যালবাম। বিলবোর্ডের মতো যদি কোনো চার্ট সিস্টেম থাকত, দেখা যেত, অ্যালবামের ১২টি গানই টপে থাকত। আমাদের শিল্পীদের এখনো মূল উপার্জনের জায়গা স্টেজ। যাদের বয়স হয়ে গেছে, তাদের স্টেজ শোয়ের চেয়ে রয়্যালটির ইনকামটা বড় হওয়ার কথা ছিল। তাদের ক্রিয়েশনের সময় ছিল ২০ বছর। এখন রয়্যালটি তাদের মানসিকভাবে শান্তিতে রাখত। দেশ-বিদেশে ভক্তদের কারণে আমি এখনো স্টেজ শো করছি, এটা একটা পজিটিভ দিক। জানি না কতদিন পারব। রয়্যালটি সিস্টেম ভালো হলে আর্থিক দিক থেকে টেনশনে থাকতে হতো না।’

আরও পড়ুন:

লাল খেলনা গাড়িটার কথা মনে পড়ত তার বুকে হাত দিয়ে পড়ে যান শাফিন আহমেদ

নিজেদের দল মাইলস নিয়েও তার আক্ষেপ ছিল। দল ছেড়ে কয়েকবার বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ দিকে একাই গান করতে শুরু করেন। দল নিয়ে দ্বন্দের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো এখনো চলমান। শুরুতে যে রকম ছিল, এখনো সেই অবস্থাতেই আছে। সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের আইনব্যবস্থা খুব একটা দ্রুত চলে না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। আমার সংগীতজীবনের অনেক কাজ রয়েছে মাইলসের সঙ্গে। আমার বর্তমান জীবনের জন্য আইনগতভাবে আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। নিজের ও পরের প্রজন্মের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠার এ লড়াই চলবে।’

শাফিন আহমেদের লড়াই আপাতত শেষ হয়েছে। আজ (২৫ জুলাই) বৃহস্পতিবার জাগতিক ভ্রমণ শেষ করে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন অন্য জগতে। তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত লড়াই কি কেউ এগিয়ে নেবে? সে খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

আরএমডি/এএসএম