তিতুমীর কলেজের নতুন বিজ্ঞান ভবনের নিচের কক্ষটি যেন রূপ নিয়েছে সহমর্মিতার এক অনন্য কর্মস্থলে। চারদিকে চেয়ার-টেবিল কিংবা বইয়ের পরিবর্তে শোভা পাচ্ছে নানা প্রকারের খাদ্যসামগ্রী, ওষুধপত্র এবং বন্যার্তদের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। কক্ষের প্রতিটি কোণ থেকেই ফুটে উঠছে শিক্ষার্থীদের নিখাদ ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং মানবতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
কলেজের শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সহপাঠী, বন্ধু, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং স্নেহের ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে তারা একত্রিত হয়েছে বন্যার্তদের জন্য উপহার প্যাকেজিংয়ের কাজে। কারো হাতে রয়েছে চিড়া ভর্তি প্যাকেট, কেউ ব্যস্ত মুড়ি প্যাকেজিংয়ে, আর কেউ ওষুধ গুছিয়ে রাখছে। সবার কাজই ভাগ করে দেওয়া হয়েছে যাতে দ্রুততার সঙ্গে সব কাজ সম্পন্ন করা যায়।
এই প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে একটি গভীর উদ্দেশ্য। তা হচ্ছে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মুখে হাসি ফোটানো। প্যাকেজিংয়ের সময় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছে নানা গল্প ও অভিজ্ঞতা। কেউ শোনাচ্ছে দেশ স্বাধীন করার গল্প, কেউ বলছে বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কথা, আবার কেউ কেউ বর্ণনা করছে বন্যার দুঃখের কাহিনি। এরই মধ্যে তারা একে অপরকে উৎসাহিত করছে, সাহায্য করছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি যেন একটি বড় দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন দেশের ইতিহাসে যত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছেশুধু প্যাকেজিং নয়, এই উদ্যোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফান্ড সংগ্রহ। তথ্য মতে, তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত তিন দিনে মোট ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৩ টাকা সংগ্রহ করেছে। শনিবার ৫৫ হাজার ৭২০ টাকা, শুক্রবার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৩৭ টাকা, এবং বৃহস্পতিবার ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৪৬ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফান্ড কালেকশন চলমান থাকবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই উদ্যোগে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের অবদানও কোনো অংশে কম নয়। সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাধ্যমতো। শিক্ষকদের পাশাপাশি আশপাশে অবস্থানরত মসজিদ, দোকানপাট কিংবা পথচারী সবাই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন এবং তাদেরকে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে উৎসাহিত করেছেন।
বন্যার্তদের জন্য এই উপহার প্যাকেজগুলোতে শুধু খাদ্যসামগ্রী বা ওষুধপত্রই নয়, রয়েছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের নিখাদ ভালোবাসা এবং সহযোগিতা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে, বিপদের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আসল মানবিকতা।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে এবং মানবিক সেবায় তাদের নিজেদের নিয়োজিত করতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি আর ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ।
আরও পড়ুন সাপের উপদ্রব থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন বাংলার ৫ লাখ মানুষ মারা যায় ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়েকেএসকে/জিকেএস