দেশজুড়ে

অপকর্মে একে অন্যের সহযোগী বাবা-ছেলে

এমপি-মন্ত্রীর পদ আলাদীনের চেরাগের মতো বদলে দিয়েছে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ও তার পরিবারের সদস্যদের ভাগ্য। তাদের আমলনামায় আছে সব ধরনের মন্দ কাজ। এমনকি সব কুকর্মে বড় ছেলে রঞ্জনকেও সহযোগী করেন টুকু। অপকর্মে একে অন্যের সহযোগী ছিল বাবা-ছেলে। নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি জমি দখল, অবৈধ বালির ব্যবসা করে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। সরকার পতনের পর শামসুল হক টুকু গ্রেফতার হলেও লাপাত্তা তার দুই ছেলে।

স্থানীয় সূত্র ও নির্বাচনী হলফনামা পর্যালোচনায় জানা যায়, শামসুল হক টুকুর ২০০৮ সালে পাবনার বেড়া উপজেলায় পৈতৃক ভিটায় টিনের ঘর ছাড়া কোনো বাড়ি ছিল না। দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রীদের ছিল না জমিজমা। বিশেষ করে বড় ছেলে আসিফ শামস ওরফে রঞ্জন ছিলেন পাবনা শহরের কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিন্তু ২০০৮ সালে টুকু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমে সংসদ সদস্য ও পরে প্রতিমন্ত্রী হতেই পাল্টে যায় তার পরিবারের সবার ভাগ্য।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামসুল হক টুকু জয়ী হয়ে টানা ১৬ বছর পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি পাবনা জজকোর্টের সাধারণ এক আইনজীবী ছিলেন। কয়েক দফায় এমপি হয়ে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দায়িত্ব পালনকালেই তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা হয়ে ওঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়া পৌর এলাকার নিজ মহল্লা বৃশালিখায় গড়ে তোলেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রাজকীয় ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে কমিশন বাণিজ্য করে প্রচুর অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টুকু জয়ী হয়ে টানা ১৬ বছর পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি পাবনা জজকোর্টের সাধারণ একজন আইনজীবী ছিলেন। কয়েক দফায় এমপি হয়ে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালেই তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা হয়ে ওঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়া পৌর এলাকার নিজ মহল্লা বৃশালিখায় গড়ে তোলেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রাজকীয় ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে কমিশন বাণিজ্য করে প্রচুর অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন।

বাবার দাপটে ঘুরতেন রঞ্জন-ফাইল ছবি

আরও পড়ুন দুই মায়ের নামে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খুলে লোক ঠকাতেন নুরুজ্জামান  ডুপ্লেক্স বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ, ‘দেশ ছেড়েছেন’ শামীম ওসমান 

পরে টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে বাবার প্রভাব খাটিয়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক পাচারসহ নানা কায়দায় কোটি কোটি টাকা আয় করেন রঞ্জন। বাবার খুঁটির জোরে তিনি সে সময় ঢাকায় ভিশন টেল লিমিটেড নামে কোম্পানি খুলে শুরু করেন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিটিআরসি ২৭০ কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলাও করে। অবৈধ আয়ে কেনা হয় কয়েকশ বিঘা জমি। টুকুর স্ত্রী, দুই ছেলেসহ বড় ছেলে রঞ্জনের স্ত্রীর নামে খোলা হয় কয়েকটি কোম্পানি। এর পাশাপাশি বড় ছেলে রঞ্জন কোটি কোটি টাকা পাচার করে লন্ডনে একাধিক বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। স্ত্রী, সন্তানসহ হয়েছেন সেখানকার নাগরিক। হোমল্যান্ড প্রপার্টিস, আশনা এন্টারপ্রাইজসহ অন্তত ছয়টি কোম্পানির নামে অর্থপাচার করেছেন রঞ্জন।

লন্ডনপ্রবাসী বড় ছেলে রঞ্জনকে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ২০২০ সালের দিকে বেড়া নিয়ে আসেন টুকু। ঢাকা থেকে বেড়া এসে রঞ্জন বাবার সহায়তায় আপন চাচা সাবেক বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনকে সরিয়ে বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেন। সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে জয়ী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি বিতর্কিত একটি সম্মেলনের মাধ্যমে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তার বাবার নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার হাট-বাজার এবং নৌঘাটের ইজারা থেকে শুরু করে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের নিয়োগসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এসব থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, লন্ডনপ্রবাসী বড় ছেলে রঞ্জনকে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ২০২০ সালের দিকে বেড়া নিয়ে আসেন টুকু। ঢাকা থেকে বেড়া এসে রঞ্জন বাবার সহায়তায় আপন চাচা সাবেক বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনকে সরিয়ে বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেন। সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে জয়ী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি বিতর্কিত একটি সম্মেলনের মাধ্যমে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তার বাবার নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার হাট-বাজার এবং নৌঘাটের ইজারা থেকে শুরু করে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বেসরকারি স্কুল কলেজের নিয়োগসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এসব থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেন তিনি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনতার লেখা-ছবি জাগো নিউজ

অবৈধ বালু ব্যবসা ও জমি দখল

বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীতে কোনো বালুমহাল নেই। কিন্তু এর পরেও বহু বছর আগে থেকেই বালু দস্যুদের কয়েকটি চক্র যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করত। বছর তিনেক আগে রঞ্জন বেড়ায় এসে মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়া মাত্রই উপজেলার গোটা বালু সাম্রাজ্য নিজের দখলে নেন। যমুনাপাড়ের পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ এবং হুরাসাগর নদের পাড়ে থানাপাড়া (পোর্ট এলাকা বলে পরিচিত) ও অধীননগরসহ কয়েকটি গ্রামের পাঁচ-ছয়টি জায়গায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রচুর জায়গা দখল করে বালু মজুত করেন। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী গত তিন বছরে তিনি এসব জায়গা থেকে শতকোটি টাকারও বেশি বালু বিক্রি করেছেন।

বেড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এনামুল হক শামীম বলেন, ‘রঞ্জন বাবার প্রশ্রয়েই অবৈধ বালু উত্তোলন, দখলবাজিসহ নানা অপকর্ম করেছেন। পায়না মহল্লায় আমাদেরও কয়েক বিঘা জমি তিনি জোর করে দখল করেন। প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া করে রেখেছিলেন। আমি টুকু ও রঞ্জনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

বিআইডব্লিউটিএ থেকে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লায় অবস্থিত হুরাসাগর পাড়ের বৃশালিখা নৌঘাট ইজারা নিয়েছিলেন মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম। কিন্তু তাকে ঘাট থেকে তাড়িয়ে এর দখল নেন রঞ্জন। নিজের লোকদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘাটের টোল আদায় করেন তিনি। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশু ও সবজির হাট বলে পরিচিত বেড়া পৌরসভার আওতাধীন করমজা চতুরহাটও কৌশলে নিজের নামে করে নিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে নিজের বাহিনীর লোকজন দিয়ে আদায় করেছেন কয়েক কোটি টাকার খাজনা। এছাড়া তিনি সাঁথিয়ার সরকারি মৎস্য প্রজননকেন্দ্র দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। সেই খামারে ১৫-১৬টি পুকুর ছাড়াও ছিল শতাধিক গরু। সরকার পতনের পর সব গরু ও পুকুরের মাছ লুট হয়ে যায়।

নির্যাতন, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলবাজিতে দানব রূপ নিয়েছিলেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকু ও তার বড় পুত্র রঞ্জন। প্রয়োজনে কোনো হিসেব ছাড়াই দখলে নিতেন সরকারি-বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে বা বাপবেটার বাইরে গেলে তাদের ওপর নেমে আসতো নির্যাতন।

অফিস ভাঙচুর-ছবি জাগো নিউজ

প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতন

২০২১ সালের নভেম্বরে বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে রঞ্জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল তারই আপন চাচা আব্দুল বাতেনের। আব্দুল বাতেন ছিলেন বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। নির্বাচনে চাচাকে পরাজিত করে রঞ্জন জয়ী হলেও চাচা ও তার সমর্থকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। বাবা শামসুল হক টুকুর পরামর্শে আব্দুল বাতেনের সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেন রঞ্জন। তার বাহিনী দিয়ে আব্দুল বাতেনের সমর্থকদের ওপর হামলাও চালানো হয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলে আসে। এতে টুকুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ। সেই নির্বাচনে আব্দুল বাতেন ও তার সমর্থকসহ আওয়ামী লীগেরই একটি বড় অংশ সাইয়িদের পক্ষ নেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই সময় বেড়া ও সাঁথিয়ার ভোটাররা মূলত রঞ্জনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই সাইয়িদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টুকুই নির্বাচনে জয়ী হন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নানা কারসাজি করে টুকুকে ওই নির্বাচনে জেতানো হয়।

রঞ্জনের অবৈধ বালুর স্তূপ-ছবি জাগো নিউজ

এদিকে নির্বাচনে টুকু জয়ী হওয়ার পর পরই মাঠে নামে রঞ্জনের বাহিনী। নির্বাচনী এলাকার অর্ধশতাধিক সাইয়িদ সমর্থককে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর দোকানে তালা মেরে বন্ধ করা হয়। কোনো কোনো দোকানে চালানো হয় লুটপাট। আবার যেসব দোকান বন্ধ করা হয় সেগুলো চালুর জন্য বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই নেওয়া হয় মোটা অংকের চাঁদা।

আরও পড়ুন আবদুল হামিদের ছত্রছায়ায় অঢেল সম্পদের মালিক দুই ভাই  মানুষ আমাকে ভয় পায় না, ভালোবাসে 

বেড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আমি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারও পক্ষেই কোনোরকম সমর্থন প্রকাশ করিনি। তবে নির্বাচনের প্রচারণার সময় টুকুর পক্ষের লোকজন এসে নির্বাচনী মিছিলে অংশ নিতে বলেছিল। আমি সেই মিছিলে যাইনি। এটাই ছিল আমার অপরাধ। নির্বাচনের পরে রঞ্জনের লোকজন এসে আমার দোকান তালা মেরে বন্ধ করে দেয়। দোকান খুলে দেওয়ার জন্য আমি রঞ্জনের কাছে এমনকি তার বাবার কাছেও অনেক অনুনয় বিনয় করেছি। শেষ পর্যন্ত ৪৮ দিন পর আমার দোকান খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেজন্য রঞ্জনের বিভিন্ন লোককে ৭০ হাজার টাকারও বেশি চাঁদা দিতে হয়।’

ডুপ্লেক্স বাড়ির বর্তমান হাল-ছবি জাগো নিউজ

বেড়া পৌর মার্কেটে পান-সিগারেট ও স্ন্যাকসের ছোট একটি দোকান রয়েছে আব্দুস সামাদের। দোকানটি তিনি পৌরসভা থেকে লিজ নিয়ে নিয়মিত ভাড়া শোধ করতেন। তিনি বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে টুকুর পক্ষে কাজ না করায় নির্বাচনের পরদিন ৮ জানুয়ারি রঞ্জনের বাহিনীর লোকজন মালামালসহ আমাকে দোকান থেকে বের করে দেয়। তখন দোকানটি দেওয়া হয় রঞ্জনের এক অনুসারীকে। দোকান থেকে বের করে দেওয়ায় উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যায় আমার। অবশ্য সরকার পতনের পর এখন দোকানটি ফিরে পেয়েছি।’

বেড়া পৌর এলাকার পায়না মহল্লার মান্নান মোল্লা বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টুকুর পক্ষে কাজ না করায় রঞ্জনের বাহিনী আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর করে। আমার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা। বাবা-ছেলে মিলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করে রেখেছিলেন।’

বৃশালিখা ঘাট-ছবি জাগো নিউজ

তার যত দখলবাজি

বিআইডব্লিউটিএ থেকে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লায় অবস্থিত হুরাসাগর পাড়ের বৃশালিখা নৌঘাট ইজারা নিয়েছিলেন মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম। কিন্তু তাকে ঘাট থেকে তাড়িয়ে এর দখল নেন রঞ্জন। নিজের লোকদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘাটের টোল আদায় করেন তিনি। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশু ও সবজির হাট বলে পরিচিত বেড়া পৌরসভার আওতাধীন করমজা চতুরহাটও কৌশলে নিজের নামে করে নিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে নিজের বাহিনীর লোকজন দিয়ে আদায় করেছেন কয়েক কোটি টাকার খাজনা। এছাড়া তিনি সাঁথিয়ার সরকারি মৎস্য প্রজননকেন্দ্র দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। সেই খামারে ১৫-১৬টি পুকুর ছাড়াও ছিল শতাধিক গরু। সরকার পতনের পর সব গরু ও পুকুরের মাছ লুট হয়ে যায়।

সরকার পতনের পর সব গরু ও পুকুরের মাছ লুট হয়ে যায়-ছবি জাগো নিউজ

আরও পড়ুন দুই মায়ের নামে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খুলে লোক ঠকাতেন নুরুজ্জামান  ডুপ্লেক্স বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ, ‘দেশ ছেড়েছেন’ শামীম ওসমান 

মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষমতার জোরে রঞ্জন আমার বৈধভাবে ইজারা নেওয়া বৃশালিখা ঘাট দখল করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া রাতের অন্ধকারে তার বাহিনী বুলডোজার দিয়ে আমার পাকা অফিস ভবন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট আমি আমার ইজারা নেওয়া ঘাটটি ফেরত পাই।’

দখলি জমি অধিগ্রহণ- ছবি জাগো নিউজ

সব এখন ধ্বংসস্তূপ

সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমেই হামলা করে টুকু-রঞ্জনের বাড়িতে। পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লায় অবস্থিত রাজকীয় ওই বাড়ি থেকে সবকিছু লুটপাট করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাড়ির দরজা, জানালা এমনকি সীমানা প্রাচীরের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। একই দিন সাঁথিয়ায় অবস্থিত রঞ্জনের খামার থেকে শতাধিক গরু ও প্রায় ১৬টি পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এর পরদিন লোকজন রঞ্জনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বেড়া পৌর ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ১৪ আগস্ট রাতে শামসুল হক টুকু গ্রেফতার হন। ভোগ করেছেন রিমান্ডও। অন্যদিকে সরকারের পতনের দিন থেকে আসিফ শামস রঞ্জন আত্মগোপনে। দু-তিনদিন আগে তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পেরেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। তবে তাদের ধরে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এসএইচএস/জিকেএস