আইন-আদালত

আপিল শুনানিতে সাজা বাতিল চাইলেন খালেদার আইনজীবীরা

বিএনপি চেয়ারপারসন ট্রাস্ট পরিচালনা করেছেন বা ব্যাংক হিসাব খুলেছেন, এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই বলে শুনানিতে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আপিল মঞ্জুর করার আবেদন জানিয়ে তিনি দাবি করেন পুরো বিচারপ্রক্রিয়াই কলুষিত হয়েছে। শুনানিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাজার রায় বাতিলের আর্জি জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

এ মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানিতে বুধবার (৮ জানুয়ারি) তার আইনজীবীরা এমন আর্জি জানান। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি করেন। বৃহস্পতিবার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

এই মামলাকে উদ্দেশ্যমূলক মামলা হিসেবে অভিহিত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, এত বছর জেল, তিনি ও তার পরিবারকে অপমান করা হলো। সাক্ষ্য-প্রমাণ কী? জেল খেটেছেন, চিকিৎসা করাতে পারেননি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতিও পাননি। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এই বছরগুলো কে দেবে?

অন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. বদরুদ্দোজা বাদল বলেছেন, বিচার বৈষম্যমূলক হয়েছে। ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত নথি পাওয়া যায়নি। ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন নথি খুঁজে পাননি। তাহলে কি অভিযোগ প্রমাণিত হয়?

বুধবার আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা, মো. রুহুল কুদ্দুস ও কায়সার কামাল। তাদের সঙ্গে ছিলেন কামরুল ইসলাম সজল, জাকির হোসেন ভূইয়া, মো. মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, ট্রাস্টের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া সই করেছেন- এমন কোনো নথি প্রসিকিউশন দেখাতে পারেনি। টাকা কোথা থেকে এসেছে, তাও দেখাতে পারেনি। আর যে অর্থের কথা বলা হয়েছে, তা ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত আছে। বিচারে সংবিধান ও আইন অনুসরণ করা হয়নি। তাই বিচার ‘কলুষিত’ হয়েছে।

তাদের দাবি, মামলাটি আইনগত, মৌখিক, এমনকি শোনা সাক্ষ্য-প্রমাণহীন। আর কোনো ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণহীন মামলায় মুখ্য আপিলকারীর (খালেদা জিয়া) ক্ষেত্রে দণ্ড ও সাজা বাতিল হলে অন্য যারা আপিল করেননি, তারাও এর সুবিধা (খালাস) পেতে পারেন বলে নজির রয়েছে।

আরও পড়ুন

লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া‘দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে’ ঢাকা ছাড়ার আগে খালেদা জিয়া

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে এবং সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ খালেদা জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করার আদেশ দেন। পাশাপাশি সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা পৃথক আপিলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়।

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বলেন, সংবিধানের ৩৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অপরাধের দায়যুক্ত কার্য সংঘটনের সময় বলবৎ ছিল- এমন আইন ভঙ্গ করার অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অর্থাৎ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। অথচ ২০০৪ সালের দুদক আইনে খালেদা জিয়ার বিচার করা হয়। এ আইনটি ২০০৪ সালের ৯ মে কার্যকর হয়। এই আইনে বিশেষ জজ আদালত বিচার করেন। অপরাধ সংঘটনের পরে কার্যকর হওয়া একটি আইনে এই বিচার হতে পারে না বলে দাবি করেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, অতীতে বিদেশ থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য অনেকের কাছে অনুদান হিসেবে অর্থ এসেছে। দুদক তাদের ক্ষেত্রে কোনো মামলা করেনি। শুধু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে মামলা করে, যা বৈষম্যমূলক।

এফএইচ/এএমএ