গান আড্ডায় ‘করোনা ফান্ড’

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপের চুমুকে গিটারের টুংটাং শব্দে, আড্ডা-গান-গল্পে মুখরিত সেই টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া আর শহীদ মিনার বেদীতে আজ সুনসান নীরবতা। দুপুরের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ আর পরিবহন চত্বর আজ জনশূন্য।

করোনাভাইরাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দৃশ্যেও থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। করোনা মোকাবিলায় তারা নিয়েছেন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। প্রতিরাতে অনলাইনভিত্তিক গান-আড্ডার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থী, দোকানদার, চাওয়ালা, শিশু ও রিকশা চালকদের জন্য তারা গঠন করছেন 'করোনা ফান্ড'।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনস্থল 'আমরাই জাহাঙ্গীরনগর' ও 'শুধুই জাহাঙ্গীরনগর' নামে ফেসবুক গ্রুপে চলে এ আড্ডা।

গানের পাশাপাশি আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি, নাচতে ভালোবাসা শিক্ষার্থীদের মডার্ন ও ক্লাসিক নাচ ছাড়াও অনলাইনে চলে পাপেট শোর মতো আয়োজন।

'আমরাই জাহাঙ্গীরনগর' নামক ফেসবুক গ্রুপে এমন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা নাজমুল হাসান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে নাজমুল বলেন, চলমান মহামারিতে পর্যুদস্ত টিউশন ও খণ্ডকালীন কাজ করে পরিবার চালানো শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এসব অসচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। সেজন্য ব্যতিক্রমী কিছু করার পরিকল্পনা থেকে এবং ঘরে আবদ্ধ থেকে বিরক্ত হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সাময়িক আনন্দ দিতে আমাদের এ আয়োজন।

আর 'শুধুই জাহাঙ্গীরনগর' নামে ফেসবুক গ্রুপের আয়োজক ইতিহাস বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান শুভর উদ্দেশ্যও অভিন্ন। শুভ বলেন, দীর্ঘদিন মূলধারার অনুশীলন থেকে দূরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা শিল্পচর্চার মধ্যে আছেন, তাদের অনুশীলনের ব্যবস্থা এবং ঘরবন্দি জীবনে প্রশান্তি আনতে আমাদের এ আয়োজন। এর পাশাপাশি আয়োজনটি অসচ্ছল শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসের স্টাফদের সাহায্য করতে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শো সারেগামাপার প্রতিযোগী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অবন্তী সিথী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের সিনা হাসান, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ফিজ আপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ-২০১৭ এর ফাইনালিস্ট নুশিন আদিবা, অর্থনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ-২০১১ এর ফাইনালিস্ট প্রিয়াঙ্কাসহ গান গেয়েছেন দেশসেরা গায়করা।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে উৎফুল্ল পারফর্মাররাও। তারা বলছেন, আগে দেখা যেত, প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রোগ্রাম, ক্লাস, পরীক্ষার জন্য বাইরে ব্যস্ত সময় পার করতে হত। যার কারণে চর্চাটা ঠিক সেভাবে করা হত না। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে গানের চর্চা ধরে রাখার জন্য এ আয়োজনটি অনেক সাহায্য করবে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে আড্ডা দেয়া যায়। সর্বোপরি হোম কোয়ারেন্টাইনের একঘেয়েমি দূর করে করোনা মোকাবিলায় কিছু করতে পারাটাই বড় স্বার্থকতা হিসেবে দেখছেন তারা।

আয়োজনের বিষয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই মুহূর্তে গান আড্ডা একদিকে যেমন চলমান একঘেয়েমি জীবন থেকে দেবে মুক্তি, পাশাপাশি এ থেকে সংগৃহীত অর্থ হাসি ফোটাবে বিপাকে পড়া ক্যাম্পাসবাসীর। ভার্চুয়াল মিডিয়ায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হোক, আড্ডা হোক, বেঁচে থাকুক সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক : শাহাদাত সুমন, রসায়ন বিভাগ, ৪৭ তম ব্যাচ, শিক্ষাবর্ষ : ২০১৭-১৮ (৩য় বর্ষ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জেডএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।