ঢাবি শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে এক শিক্ষার্থীকে তার কক্ষে ঢুকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
তবে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দাবি, অভিযোগকারী শিক্ষার্থী উৎসব রায় চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ ছিল। এসব অপরাধের জন্য কারাবাসও হয়েছিল তার।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে ঢাবির জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সত্যজিৎ দেবনাথের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী উৎসব রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে তিনি হলের বাইরে আছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাকে দেখতে হাসপাতালে যান জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উৎসব রায়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ২৫ থেকে ৩০ জন তার ওপর হামলা করেন। এর মধ্যে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। এরা হলেন- ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সত্যজিৎ দেবনাথ, একই শিক্ষাবর্ষের বাঁধন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সবুজ কুমার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শুভ সাহা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের রাজিব বিশ্বাস, একই শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের গণেশ ঘোষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অমিত দে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রিভু রিদম।
এছাড়াও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্বাগতম বাড়ৈ, অর্থনীতি বিভাগের দীপ্ত রায়, উর্দু বিভাগের সবুজ শীল, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অভিষেক ভাদুড়ী, পাপন বর্মন (বিভাগ জানা যায়নি), ইতিহাস বিভাগের সৌরভ সাহা, একই বিভাগের জয় দাস। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অপূর্ব দাস, একই বিভাগের পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অমৃত মণ্ডল ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রিতম আনন্দ।
অভিযুক্তরা সবাই জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মনের অনুসারী। অতনু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচর্যের অনুসারী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উৎসব রায় জানান, দুপুরে খাওয়ার পর নিজ কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। এসময় অভিযুক্ত সত্যজিতের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল তার কক্ষের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ভেতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালান। তারা রড, স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন। তারা উৎসবের মাথায়, কানে, পিঠে মারাত্মকভাবে আঘাত করেন। এসময় উৎসব সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পরে জ্ঞান ফিরলে তাকে হল থেকে বের করে দিয়ে আর কোনোদিন হলে প্রবেশ না করার বিষয়ে সতর্ক করেন।
উৎসব রায় জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে আমার ইমিডিয়েট জুনিয়ররা আসে, আমি তাদের বলি আমি তোমাদের সিনিয়র আমার সম্মান রাখো। ঠিক তখনই পেছন থেকে সত্যজিৎ দেবনাথ বলে ওঠেন, ‘মার’। তারপর তারা আমার ওপর হামলা চালান। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করের এবং হল থেকে বের করে দেন। সত্যজিৎ আমার মাথায় আঘাত করেন। এরপর আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
তিনি বলেন, আমাকে যখন পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছিল তখন সবাই তাকিয়ে ছিল, কেউ কিছু বলে নাই। এখন পর্যন্ত হল প্রভোস্টও আমার কোনো খোঁজ-খবর নেননি। আমি এখনো পর্যন্ত হলে যেতে পারিনি। আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ দেবনাথ। তিনি বলেন, একটা ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের ১০০-২০০ ছেলে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ছিনতাই করার কারণে তিনি জেল খেটেছেন। তিনি মাদক সেবন করেন বলেও জানতে পেরেছি।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি বাইরে ছিলাম। এখন খবর নিচ্ছি৷ কেউ যদি এরকম কিছু করে থাকেন তাহলে আমরা হল প্রশাসনকে বলবো ব্যবস্থা নিতে।
জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টা আমি আজকেই জেনেছি। ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলের আবাসিক শিক্ষকদের বলে দেওয়া হয়েছে।
আল-সাদী ভূঁইয়া/কেএসআর/জেআইএম