কারখানা বন্ধের প্রভাব

বেচাকেনায় ভাটা, পেশা বদলাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি সাভার (ঢাকা)
প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, ০৯ মে ২০২৫
কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ছবি-জাগো নিউজ

‘কদিন আগেও বেক্সিমকো কারখানার সামনে চক্রবর্তী এলাকায় মুদিদোকানি ছিলাম। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অটোরিকশা চালাচ্ছি। দোকানের বাকি টাকা না উঠাতে পেরে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। মূলধন না থাকায় আর কিস্তির চাপে এখন বাধ্য হয়েছি অটো চালাতে।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বশির মিয়া। বেক্সিমকো কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেচাকেনায় প্রভাব পড়ে তার দোকানে। পরে অটোরিকশা চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

বেচাকেনায় ভাটা, পেশা বদলাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

বশির মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে গাইবান্ধা থেকে ছুটে আসেন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায়। কয়েক বছর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। জমানো টাকা আর কিস্তি তুলে আশুলিয়া সীমান্তবর্তী চক্রবর্তী এলাকায় বছর দুই আগে গড়ে তোলেন একটি মুদিদোকান। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ব্যবসার অবস্থা যখন ধীরে ধীরে ভালো হতে লাগলো, ঠিক তখনই বন্ধ হয়ে যায় বেক্সিমকো গ্রুপের সব কয়টি কারখানা। তখনই অসহায় হয়ে পড়ি। দোকানে বাকি খাওয়া কাস্টমারগুলো টাকা পরিশোধ না করে চলে যায় অন্যত্র।

শুধু বশির মিয়াই নয়, এমন অনেক বশিরের গল্পও প্রায় একই। পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়েছে মুদিদোকানসহ ক্ষুদ্র সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

বেচাকেনায় ভাটা, পেশা বদলাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

কথা হয় আশুলিয়ার বুড়িবাজার এলাকার মুদিদোকানি শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার সবচেয়ে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল বার্ডস গ্রুপ। কিন্তু জুলাই বিপ্লবে পর এর মালিক কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে যান। এতে করে শ্রমিকরা অন্যত্র চলে গেলে ব্যবসায় বেচাবিক্রি কমে যায়। আগে দুজন কর্মচারী আমাকে সহযোগিতা করলেও এখন আমি একাই সামলাতে পারি। এভাবে বেচাবিক্রি থাকলে হয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’

কবিরপুর এলাকায় মুদিদোকানি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায় কোনে লাভ নেই। তোহা গার্মেন্টসে আগে শত শত শ্রমিক কাজ করতেন। তাদেরকে ঘিরেই দোকানে বেচাবিক্রি ছিল। এখন কারখানাটিতে কয়েকজন কাজ করছেন। বেশিরভাগই চলে গেছেন অন্যত্র। দোকানের বাকি না দিয়েই অনেকে চলে গেছেন। এতে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসেছেন। কেউ কেউ আবার পেশা বদল করেছেন। আর যারা আছেন তারাও খুব কষ্টে সময় পার করছেন।’

বেচাকেনায় ভাটা, পেশা বদলাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘দোকানিদের ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার পরিমাণটা অন্যান্য বছরের চেয়ে কম। যেসব এলাকার কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে যেসব এলাকা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমছে। সেই সঙ্গে দেনা-পাওনার দণ্ড বেড়েছে কয়েকগুণ।

শ্রমিক নেতা খায়রুল মামুন মিন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি অঞ্চলের গার্মেন্টস বন্ধ হলে এর প্রভাব পড়ে নানাভাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাড়িওয়ালা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হযন। আশুলিয়াতেও তেমনটি হয়েছে। বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দিলে আশা করছি আবারও প্রাণ ফিরে পাবেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।’

মাহফুজুর রহমান নিপু/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।