করোনা রোগীশূন্য রাজশাহীর আইডি হাসপাতাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৭:৩১ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২০

রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজশাহীর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ইউনিট (আইডি) হাসপাতাল।

গত ২৬ এপ্রিল থেকে সেখানে নতুন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। ওই দিনই সর্বশেষ রোগী জেলার বাঘা উপজেলার গাওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সোবহান (৮০) মারা যান।

বিভাগজুড়ে করোনায় প্রথম মৃত তিনি। ২০ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তার করোনা ধরা পড়ে। ওই দিনই তাকে আইডি হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিশেষায়িত এই হাসপাতালে আবদুস সোবহান ছাড়াও ভর্তি হন আরও ৫২ জন। নমুনা পরীক্ষায় এদের কারও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি। এমনকি সংক্রমণ মেলেনি আবদুস সোবহানের সাথে হাসপাতালে থাকা দুই স্বজনেরও।

শুরু থেকেই আইডি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দিচ্ছিলেন পাঁচ চিকিৎসক। এছাড়া সাত নার্স, এক ফার্মাসিস্ট এবং তিন সহায়ক কর্মী দায়িত্বপালন করছিলেন সেখানে। রোগী না থাকায় ২৬ এপ্রিলই তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসা কমিটির প্রধান ডা. আজিজুল হক আজাদ বলেন, টানা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ চিকিৎসাকর্মীরা।

তারা সেখানে করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের সুরক্ষায় নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। প্রথম দফা তাদের নমুনা পরীক্ষায় ফল এসেছে নেগেটিভ। আরেকবার পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে তাদের চিকিৎসায় ফিরিয়ে আনা হবে।

আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে আবারও চালু হতে পারে আইডি হাসপাতাল। এরই মধ্যে পুরো হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ডা. আজাদ আরও বলেন, আইডি হাসপাতালের পরিবর্তে করোনা শনাক্তের পর রামেক থেকে রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মিশন হাসপাতালে। সেখানে রোগীদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।

এদিকে, রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, আইসোলেশনে মিশন হাসপাতালে পুরোনো চারজনের সাথে আরও আটজন রোগী যুক্ত হয়েছেন। পরীক্ষায় এদের কারও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
এছাড়া রামেক হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রোগীরও করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। নতুন করে আমরা আরও কিছু নমুনা পরীক্ষা করছি।

এছাড়া আইডি হাসপাতালে মৃত করোনা রোগীর সংস্পর্শে যারা ছিলেন পরীক্ষায় তাদেরও করোনা ধরা পড়েনি। আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৯ জন।

ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরও বলেন, গত ২৮ এপ্রিল থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯৫ জন রোগী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ২১৮ জন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ২৩৪ জন রোগী। এছাড়া আগের দিন বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন আরও ১৯৬ জন।

হাসপাতালে এ মুহূর্তে পিপিই মজুত আছে ১৮ হাজার। এরই মধ্যে পিপিই বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার। ১৫ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ৩১ হাজার গ্লাভসও আছে। আমরা আরও কিছু পেয়েছে, পাচ্ছি।

রামেক হাসপাতাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪০ জনের নমুনা পাঠিয়েছিলাম, একটিও পজিটিভ আসেনি। এটি ইতিবাচক ধরছেন ডা. সাইফুল ফেরদৌস।

বলেন, এখন সম্প্রদায় পর্যায়ে ছড়াচ্ছে করোনা। সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ও লকডাউন মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি।

একদিন আগেও রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২ জন। কিন্তু বুধবার একসঙ্গে ৪৪ জন নতুন আক্রান্ত হওয়ায় করোনা রোগী ৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে জয়পুরহাটে। এছাড়া বগুড়ায় ১৮ জন, নওগাঁয় ১৭, রাজশাহীতে ১৩, নাটোরে আট, পাবনায় আট, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই এবং সিরাজগঞ্জে দুজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

ফেরদৌস/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।