বরিশালে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ, করোনা আক্রান্ত ১৩

সাইফ আমীন
সাইফ আমীন সাইফ আমীন , নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ১৯ মে ২০২০

বরিশালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চারজন পুলিশ সদস্যসহ আরও আটজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ জনে। আর এর মধ্যে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১৩ জন। ১৩ জনই বরিশাল মহানগর পুলিশের সদস্য। এর মধ্যে একজন নারী কনস্টেবলও (২২) রয়েছেন। নতুন আক্রান্ত চার পুলিশ সদস্যের মধ্যে তিনজনই কোতওয়ালী মডেল থানায় কর্মরত। বাকি একজন কর্মরত ছিলেন পুলিশ লাইনে।

সোমবার (১৮ মে) রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকে নতুন আক্রান্তদের তথ্য জানানো হয়েছে।

jagonews24

মিডিয়া সেল থেকে আরও জানানো হয়, এ পর্যন্ত (সোমবার রাত) জেলায় ২৮ জন নারী এবং ৬০ জন পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ৭ জন, ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ৬৪ জন, ৫০ থেকে তার ঊর্ধে ১৭ জন। নতুন আক্রান্ত চার পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন উপপরিদর্শক (এসআই), দুইজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও একজন কনস্টেবল। তাদের বয়স যথাক্রমে ৪৫, ৩৩, ৩৩, ২২ বছর।

police

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত তাদের আসামি ধরতে হচ্ছে। অপরাধ ঘটলেই ছুটে যেতে হচ্ছে। রাস্তায় টহল ও তল্লাশিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনেরই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। এসব কাজ করতে গিয়ে জেনেশুনেই মানুষের কাছে যেতে হচ্ছে। কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আবার অনেকের ভেতরে করোনা সচেতনতার অভাব রয়েছে। তারা যেমন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, তেমনি নিজেদের সুরক্ষায় নিয়েও ভাবছেন না। এসব কারণে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক দিনে ১৩ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া আক্রান্ত সন্দেহে রোববার ৩০ জনের ও সোমবার ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। আজ মঙ্গলবার কোতওয়ালী মডেল থানার আরও ৪০ জন পুলিশ সদস্যের নমুনা নেয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আরও অনেক সদস্য আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

police

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, জনগণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। নগরীর সর্বত্র নিয়মিত টহল, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থাও করছেন তারা। পাশাপাশি করোনা শনাক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, অসহায়-কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছানোসহ করোনা প্রতিরোধে যে মহাযজ্ঞ তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তারা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৩ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তারা সংক্রমিত হয়েছেন।

police

দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্ক, ফেস শিল্ড, হেড কভারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের নিরাপদ রাখতে পুলিশ লাইন্সে জীবাণুনাশক স্প্রে কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সদস্যদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি এবং পুলিশ লাইন্সে ডিজিটাল থার্মার (তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র) প্রদান করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যারাকের ডাইনিংয়ে রুটিন খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত গরুর দুধ, ডিম ও কলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভিটামিন সি, জিঙ্ক ট্যাবলেটসহ অন্যান্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

police

শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটারসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আইসোলেশন সেন্টারে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত প্রত্যেক সদস্যকে সশরীর পরিদর্শনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে 'বিশেষ টিম' গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই বিশেষ টিমগুলো করোনায় আক্রান্ত প্রত্যেক সদস্যকে সরেজমিনে পরিদর্শন করবে, তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নেবে, হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশনে থাকাকালীন তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেবে এবং পদমর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেক সদস্য যাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান, সে ব্যাপার নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই বিশেষ টিমের সঙ্গে কথা বলে আক্রান্তদের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

সাইফ আমীন/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।