রংপুরে ২০ দিনে ৮৯ পুলিশের শরীরে বাসা বেঁধেছে করোনা
চীনের উহান থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে বুধবার (২০ মে) পর্যন্ত সোয়া তিন লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ লাখ। বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়ে কয়েক দফায় ৩০ মে পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়। বিভিন্ন স্থানে করা হয় লকডাউন। বন্ধ হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৩৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮৬ জনের।
জাতীয় এই দুর্যোগ মুহূর্তে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশের পুলিশ বাহিনী। মরণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছে পুলিশ। পরিবার-পরিজন ছেড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন তারা। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি অনেক জায়গায় মৃত্যবরণকারী ব্যক্তির দাফন, জানাজাসহ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানোর কাজও করতে হচ্ছে এই বাহিনীকে। অসহায় মানুষের বাড়িতে ত্রাণ নিয়েও ছুটছেন তারা।
এমন সব মানবিকতার কাজ করতে গিয়ে ১৯ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৪৯ জন পুলিশ সদস্য। এর থেকে পিছিয়ে নেই রংপুর জেলাও। ১ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের ৮৯ জন সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরও প্রায় শতাধিক সদস্য।
রংপুর জেলা পুলিশের তথ্যমতে, গত ১ মে পীরগাছা থানার এক পুলিশ সদস্যের প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০ মে পর্যন্ত জেলা পুলিশের ৬৬ জন সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। অন্যরা বাড়িতে এবং ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অপরদিকে মহানগর পুলিশের তথ্য মতে, গত ৩ মে কোতোয়ালি থানা পুলিশের এক কর্মকর্তার প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ২০ মে পর্যন্ত মহানগর পুলিশের ২৩ জন সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরও ১৯ জন।
মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শামীমা পারভীন জাগো নিউজকে জানান, ২০ মে পর্যন্ত মহানগর পুলিশের ২৩ জন সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালসহ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে করোনা হাসপাতাল থেকে একজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে বাড়িতে চিকিৎসাধীন ৩-৪ জন সুস্থ হয়েছেন বলেও তিনি জানান। এছাড়া আরও ১৯ জন সদস্য কোয়ারেন্টাইনে আছেন। পুলিশ লাইন্সসহ কোতোয়ালি থানার ব্যারাকে তারা কোয়ারেন্টাইন পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও ফলমূলসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছু পুলিশ কমিশনার প্রদান করছেন।
জানতে চাইলে রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবু মারুফ হোসেন জানান, ২০ মে পর্যন্ত জেলা পুলিশের ৬৬ জন সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা বাড়িতে এবং ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ৮০ জনের মতো সদস্য পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন পালন করছেন।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, ফলমূল ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বুধবার (২০মে) পর্যন্ত আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রংপুর জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩১৪ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে দুই শতাধিক এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর শনাক্ত হয়েছেন তিনজন। এদের মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার দুইজন এবং নগরীর শালবন এলাকার একজন।
জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম