সিলেটে একদিনে তিনজনের মৃত্যু, ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ১১ জুন ২০২০

সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বৃদ্ধসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকালে তাদের মৃত্যু হয়। দুপুর ২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল।

মৃতরা হলেন- গোলাপগঞ্জের করোনায় আক্রান্ত মতিন মিয়া (৬৫), করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার গোটাটিকর এলাকার আব্বাস আলী (৯৫) ও সিলেট সদর উপজেলার পারভীন বেগম (৪৫)। এর মধ্যে পারভীন বেগম করোনা রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিলেন।

এছাড়া শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারের আইসিইউতে ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এরই মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোলাপগঞ্জের মতিন মিয়ার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের তুরুকভাগ গ্রামের বাসিন্দা।

মৃত আব্বাস আলী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার গোটাটিকর এলাকার বাসিন্দা। বুধবার রাতে শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হন। সকালে তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে বৃদ্ধ মতিন মিয়ার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী।

তিনি বলেন, বাঘা ইউনিয়নের তুরুকভাগ গ্রামের প্রথম করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে মারা গেছেন।

এর আগে ৩১ মে বৃদ্ধ মতিন মিয়ার করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, সিলেটে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্ধারিত স্থান শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।

বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৬ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ৪০ জন ও ৩০ জন করোনা সন্দেহভাজন। বাকিদের উপসর্গ দেখা যায়নি।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে কোনো রোগী ভেন্টিলেশনে নেই।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে ৪১ জনের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮০ জন রোগী। এর মধ্যে ১২৭ জন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে, সুনামগঞ্জে ১৪৭ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ৯৯ জন ও মৌলভীবাজারে সাতজন চিকিৎসাধীন।

ইতোমধ্যে করোনাজয় করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩৩ জন। সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৬৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৭৫ জন সিলেটের, ৪৬ জন সুনামগঞ্জের, হবিগঞ্জের ১৯ জন ও ২৬ জন মৌলভীবাজারের।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৮। যাদের সাতজন সিলেটের, সাতজন সুনামগঞ্জের ও চারজন হবিগঞ্জের। একই সময়ে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন। যাদের দুজন সিলেটের ও অপরজন হবিগঞ্জের।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল পর্যন্ত ১৯৬৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে ১১৬৩ জন, সুনামগঞ্জে ৩৯৬ জন, হবিগঞ্জে ২২৭ জন ও মৌলভীবাজারে ১৭৮ জন।

সিলেট বিভাগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৩৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে ১৩৮ জন, সুনামগঞ্জে ৯৪ জন, হবিগঞ্জে ৯৯ জন ও মৌলভীবাজারে সাতজন।

এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৩১ জন, মৌলভীবাজারে চারজন সুনামগঞ্জে তিনজন ও হবিগঞ্জে তিনজন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে আরও ২৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৫ জন সিলেট জেলার, ৪৬ জন সুনামগঞ্জের, হবিগঞ্জের ১৯ জন ও ২৬ জন মৌলভীবাজারের।

ছামির মাহমুদ/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।