পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু নেই আর নেই
প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট নেই, ওয়ার্ড বয় নেই, ইমার্জেন্সি অ্যাটেনডেন্ট নেই, আয়া নেই, নিরাপত্তা কর্মী নেই, নেই সুইপারও। নেই এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। ইসিজি থাকলেও অপারেটর নেই। এতো নেই এর মধ্য দিয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্যাথলজি থাকলেও সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই হয় না। ফলে রোগীদের ছুটতে হয় অন্যত্র।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে কলমে ৫০ শয্যা হলেও চলছে মূলত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে। সেই ৩১ শয্যার জন্যও প্রয়োজনীয় জনবলও নেই। আর তাই এখান থেকে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছেন দালালরা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার।
খুলনা শহর থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১১ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যা হলেও শুধু ৫০ জনের খাবার দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই হয় না। ৫০ জন রোগীর জন্য নেই পর্যাপ্ত ভবনও।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এক লাখ ৭৮ হাজার জনগণের জন্য এ হাসপাতালে রয়েছে মাত্র তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সেই হিসেবে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ হাসপাতালটিতে। ৪২তম বিসিএস ক্যাডারের ১৩ জন চিকিৎসক হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ থাকলেও রয়েছেন মাত্র সাতজন। হাসপাতালটিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ১১, দ্বিতীয় শ্রেণির ২১, তৃতীয় শ্রেণির ১০৬ ও চতুর্থ শ্রেণির তিনজন জনবল বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পদই ফাঁকা। ফলে হাসপাতালের রোগী সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পাইকগাছার সরল গ্রামের ওয়াহেদ আলী সানা, নিতাই গাইন, সালেহা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলো ভোগান্তির জায়গা। এখানে রোগী ভর্তি হলে ঠিক মতো সেবা পাওয়া যায় না। ডাক্তার যে কয়জন রয়েছেন তারাও ঠিকমতো আসেন না।
তারা আরও বলেন, হাসপাতালের সামনে-পেছনে রয়েছে একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। অথচ হাসপাতালে মাছিও বসছে না এমন অবস্থা। শুধু একটা জায়গায় খুব ভালো অবস্থা রয়েছে। দুই টাকায় দুই লিটার সুপেয় পানি পাওয়া যায় হাসপাতালটিতে। তবে সেটিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নয়, বাইরের থেকে দেওয়া হয়।
এদিকে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগী নেই অনেক বিছানায়। কারণ জানতে চাইল রোগীর স্বজনরা জানান, মাঝে মধ্যে কয়েকজন লোক আসে তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে সকালে কথা বলেন। দুপুরের পর সেই রোগীদের আর পাওয়া যায় না। সুইপার না থাকায় টয়লেটগুলোও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না।
হাসপাতালটিতে অনেক কিছু নেই স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, চিকিৎসক আর জনবল না থাকায় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাসপাতালে নেই কোনো এক্স-রে মেশিন, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন তাও অকেজো। আরেকটা দিয়ে বটিয়াঘাটায় কাজ চলছে। সেটা ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
প্যাথলজির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে প্যাথলজিতে রুটিন কিছু পরীক্ষা হয়ে থাকে। এক সময় প্যাথলজি থেকে মাসে ২০ হাজার টাকার বেশি রাজস্ব দেওয়া এলেও এখন তা ৭-৮ হাজারে নেমে এসেছে।
রোগীদের পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যা এখানে হয় না তা বাইরে থেকে করে আনতে বলা হয়। অনেক সময় রোগী খুলনায় চলে যায়।
রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, দালাল ঠেকানো খুব কঠিন। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। কিন্তু রোগীর স্বজনরা বাইরে গেলে তাদের ফুসলিয়ে নিয়ে যায় আশপাশের ক্লিনিকে। বর্তমানে পাইকগাছায় ১৬ ক্লিনিক ও ২১ ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি। তবে তাতে খুব বেশি ফল হয়নি।
এসজে/এএইচ/জিকেএস