মিরসরাইয়ে খাবারের অভাবে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, উপকূলীয় বন উজাড়সহ নানা প্রতিকূলতায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। খাদ্য সংকটে লোকালয়ে ছুটে আসে বন্যপ্রাণী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বপাশে বিস্তীর্ণ পাহাড়, পশ্চিমে সুন্দরবন খ্যাত ম্যানগ্রোভ বন। কিন্তু মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে প্রায় ৮০ ভাগ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এতে বিচরণক্ষেত্র হারিয়েছে বন্যপ্রাণীরা। মানুষের পদচারণা, শিল্প-কারখানা নির্মাণ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবসহ নানা কারণে লোকালয়ে ছুটে আসছে বন্যপ্রাণীর দল।
উপজেলার সাহেরখালী থেকে মুহুরি প্রকল্প পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের উপকূলীয় বন এখন নেই। উপজেলার ডোমখালী, গজারিয়া এলাকার বনে হরিণসহ নানা প্রাণী এ বনে ছিল। ছিল পরিবেশ সহায়ক নানা প্রজাতির বৃক্ষ।
স্থানীয়রা জানান, শিল্পাঞ্চলের জন্য এখানকার ২৬ হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় হওয়ায় খাদ্য ও পানির সংকটে লোকালয়ে ছুটে আসছে মায়া হরিণ। ফলে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের মঘাদিয়া ঘোনা এলাকায় বেড়িবাঁধে গাড়িচাপায় দুটি হরিণ মারা যায়। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়িচাপায় হরিণ দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে হরিণ দুটি উদ্ধার করে মাটিচাপা দেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফেসর আইয়ুব আলীর বাড়ির পাশের জমি থেকে একটি অজগর উদ্ধার করা হয়। পরে অজগরটি বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বনবিভাগের গোভনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহন শাহ নওশাদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি ২৫ কেজি ওজনের অজগর উদ্ধার করে গোভনিয়া বিটে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হয়তো খাবারের অভাবে অজগরটি পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসেছে। চলতি বছরের ৯ মে ধানি জমিতে মেছো বাঘের বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মিরসরাইয়ের চরশরৎ এলাকায় খামারবাড়িতে।
এরআগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব রহমতাবাদ গ্রামের লাতু বলীর বাড়িতে ধরা পড়ে ভবঘুরে শকুন। ২১ মার্চ পশ্চিম মলিয়াইশে ধরা পড়ে একটি মেছো বাঘ। ২২ জুন দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের দুর্গম পাহাড়ে এবং ৪ ডিসেম্বর উত্তর আমবাড়িয়া গ্রামে ধানক্ষেতে ধরা পড়ে অজগর। একই বছরের ২৬ মে মিঠানালা ইউনিয়নের মধ্যম মুরাদপুর বানাতলী গ্রামের দ্বারবক্স ভূঁঞা বাড়িতে ধরা পড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের জন্য উপকূলীয় ২৬ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর দুই-তৃতীয়াংশ বন ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। যেখানে প্রায় এক হাজার মায়া হরিণ রয়েছে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে হরিণগুলো। এছাড়া খাদ্য ও মিঠা পানির সংকট প্রকট হয়েছে। এতে হরিণগুলো বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে এসে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
মিরসরাই উপজেলার বনাঞ্চলে এক সময় লজ্জাবতী বানর, শকুন, মেছোবাঘ, গুইসাপ, শিয়াল, বন্যমোরগ, বাঘডাসের দেখা মিললেও এখন প্রায় হারিয়ে গেছে।
মিরসরাই মিরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাইয়ে একটি জনসভা শেষে উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনে ২৭টি হরিণ-শাবক অবমুক্ত করেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে ২৭ থেকে হাজারে পরিণত হয়েছিল। এখন অনেকটা কমে গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক এ এস এম জিয়াউর রহমান বলেন, এত বড় বন সম্পূর্ণ উজাড় না করে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অভয়ারণ্য অক্ষত রাখা প্রয়োজন ছিল। অপরিকল্পিতভাবে জীবজন্তু বিলুপ্ত করে শিল্পায়ন হলে এর কুফল সবাইকে ভোগ করতে হবে।
আরএইচ/জিকেএস