খুলনায় দাম কমেছে সবজির, তেল-চিনি-আটার বাজার চড়া
অডিও শুনুন
খুলনার বাজারে সবজিতে স্বস্তি মিললেও তেল চিনি আটাতে বেধেছে বিপত্তি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব পণ্য তো মিলছেই না, তার উপর কৃত্রিম সংকটের আভাস দিয়ে চলেছে বড় বড় কোম্পানিগুলো। একচেটিয়া ব্যবসাই তাদের মূল উদ্দেশ্য এমনটাই ধারণা ছোট ব্যবসায়ীদের।
ফলে বড় কোম্পানিগুলোর কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। তার চেয়েও বেশি বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে খুচরা ক্রেতাদেরকে। নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিনিসপত্র কেনার পরিমাণও কমে গেছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার রূপসা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের দোকানদাররা অলস সময় পার করছেন। অথচ কিছুদিন আগেও এসময়ে বাজারে ক্রেতা আর বিক্রেতার পদভারে মুখর থেকেছে। ক্রেতাদের ভিড় না থাকায় থমকে গেছে ব্যবসায়ীদের চাঞ্চল্যতা।
এই বাজারের মুদি দোকানি নান্টু মিয়া বলেন, ক্রেতা নেই, তাই অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। কারণ বাজারের প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতার আয় বাড়েনি। আগে যিনি সপ্তাহে এক কেজি চিনি কিনতেন এখন তিনি কিনছেন আধাকেজি। আটা, তেলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, আমার দোকান থেকে আশপাশের চায়ের দোকানদাররা বেশি চিনি কিনতেন। কিন্তু চা বিক্রেতারা এখন আর সেই পরিমাণ চিনি কিনেন না। তাদের দোকানেও চিনি ছাড়া চায়ের ক্রেতা বেশি।
একই পরিস্থিতি নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের দোকানদারদের। এই বাজারের ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, বাজারে সকালে কিছু ক্রেতা আসে। এরপর সারা দিন প্রায় হাতগুটিয়ে বসে থাকতে হয়। সকালের ২/১ ঘণ্টায় যা বেচা কেনা হয় তা দিয়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।
জানতে চাইলে তারা বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়তি থাকার কারণে তাদের অনেক ক্রেতা ওএমএসের দিকে ঝুঁকছেন। যারা লাইনে দাড়িয়ে চাল কিনতে পারছেন না তারাই মূলত দোকানে এসে কিনছেন।
সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে মাল উঠিয়ে ব্যবসায় করছেন এই বাজারের অনেক ব্যবসায়ী। সাপ্তাহিক কিস্তি দেওয়ার ভয়ে অনেকেই দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ী রহিম। তিনি বলেন, কিস্তির টাকাও ওঠে না, পরিবার নিয়ে কি করবো তাই এখন চিন্তার বিষয়।
নগরীর গল্লামারী, রিয়া বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব বাজারেই চিনি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ১৭ নভেম্বর চিনির দাম ১০৮ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়। চাল ও তেলের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। বর্তমানে ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ১৯৬ টাকায় এবং ভাল মানের সরু মিনিকেট ৭৬ টাকা ও মোটা চাল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটার দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৬০ ও ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন বাজারের সরোয়ার জমাদ্দার বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মতো দোকানে বেচাকেনা নেই। অনেক ক্রেতাই এখন টিসিবি থেকে তেল, চিনি ও ডাল কিনেন।
নগরীর দোলখোলা বাজারের ব্যবসায়ী সালাম বলেন, ১৭ নভেম্বর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরও কিছু নামীদামী কোম্পানি তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার দোকানে ক্রেতাও অনেক কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বড় বাজারের চালের মোকামের একাধিক চাল ব্যবসায়ী হতাশা প্রকাশ করে জানান, গতবছর এসময়ে ২২০০ বস্তার মতো চাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। দুমাস ধরে ক্রেতারা এখানে আসছেন না।
কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, এক মাস ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল। মানুষ এখন বেশি দরে চাল কিনতে চায় না। অনেকেই এখন ওএমএসের ক্রেতা। তারা আরও বলেন, ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে। সেই লোনের টাকা গোছানোর আগেই টাকা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য খরচ হয়ে যাচ্ছে।
দোলখোল চালের বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসায় নেমেছেন। তাছাড়া ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে ভরা ধানের মৌসুমে স্বল্প দামে ক্রয় করে তা সংকটের সময়ে বেশি দরে বিক্রি করছেন। আর তাদের কারণে মূলত বাজারের এ পরিস্থিতি। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনেক ক্রেতা হারিয়েছি। যারা মাস তিনেক আগেও ৫০ কেজির চাল নিতেন তারা এখন অর্ধেক নিচ্ছেন।
তবে বাজারে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তা অধিকার দপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, ডাল, তেল, চিনি সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া আমাদের অভিযান চলছে নিয়মিত। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।
আলমগীর হান্নান/জেএস/এমএস