শশীলজে দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০৮ আগস্ট ২০২৪
ছবি: দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙছে দুর্বৃত্তরা

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার দেশ ছাড়ার খবরে সারাদেশে বিভিন্ন হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ নগরীর শশীলজ ফোয়ারার মাঝখানে গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ভাস্কর্যটি ভেঙে এর মুখাবয়ব নিয়ে যায় তরা। এছাড়া বিভিন্ন অংশ ভেঙে টুকরো করে ফেলেছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হামলাকারীরা এটি ভেঙে ফেলে।

ভাস্কর্য ভাঙার ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙায় ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা সমালোচনা। কেউ এটি ভাঙার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন, আবার কেউ বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন।

শশীলজে দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়

শশীলজ ভাঙার বিপক্ষে লিখেছেন আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘জিহাদিরা উপড়ে ফেলেছে ময়মনসিংহের শশীলজের সামনের সেই শ্বেত পাথরের সুন্দর ভাস্কর্য। বাংলাদেশটা এদের। সব ধর্মবাদি সরকারের ঔরসে জন্ম হয়েছে এই জিহাদি কুলাঙ্গারগুলোর।’

সাগর সরকার তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে শখের বসে অল্পবিস্তর পড়াশোনা করেছিলাম এককালে। ময়মনসিংহের শশীলজে দেবী ভেনাসের মূর্তির মতো অদ্ভুত সুন্দর ও নিখুঁত ভাস্কর্য এই উপমহাদেশে খুব বেশি নেই বলে আমার জানা। ময়মনসিংহের ২০০ বছর পুরাতন এই আইকনিক ভাস্কর্যটি আর নেই। মূর্তি ভাঙ্গার ভিডিওটি ফেসবুকে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন। আমি আর কখনো শশীলজ যেতে পারবো না। এই বিভৎস হিংস্রতার চিহ্ন আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। ময়মনসিংহ ছেড়ে, এই দেশ ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে যেতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

আজকে যেভাবে মন্দির ভাঙা হলো, দোকান লুটপাট করা হলো, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন লাগানো হলো- এসবতো নতুন কিছু নয়। গত ১৫ বছরে একটাও মন্দির ভাঙার বিচার হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আজকে মুক্তি নিয়ে যে আমার উচ্ছ্বাস ছিল, পুরোটাই আসলে বৃথা।’

শশীলজে দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়

সাদ ফকির নামে একজন লিখেন, ‘যে দুষ্কৃতকারীরা এই ভেনাসের ভাস্কর্যটাকে ভেঙেছে, তারা কি জানে এন্টিক হিসেবে এটার দাম ‘মিলিয়ন ডলার’? তারা কি এটাকে মাটির পুতুল মনে করলো মূর্খ মধ্যযুগীয় বর্বরের দল? ওদেরকে শীঘ্রই ধরা হবে। শশীলজ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভাঙার ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

অপরদিকে আহজার মাহমুদ নামে একজন লিখেছেন, ‘উলঙ্গ একটা মূর্তি শশীলজ ঘোরার সময় সন্তানকে বাবা-মার সামনে মারাত্মক বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতো। অনেকে দেখবেন উলঙ্গ মূর্তি ধ্বংস নিয়ে হাহাকার করছে, এরা কি বাবা-মার সামনে এইরকম উলঙ্গ মূর্তির মাঝে শিল্প খুঁজে পায়?’

শশীলজ জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, শত শত লোক দল বেধে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ভাস্কর্যের মাথার অংশ পাওয়া যায়নি। এটি অমূল্য সম্পদ ছিল। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেটি পুনরায় স্থাপন করা যাবে কিনা, সে বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

শশীলজে দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়

শশীলজ হলো ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি, যা ময়মনসিংহ রাজবাড়ী নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালে শশীলজ নির্মিত হয়। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশীলজটি অধিগ্রহণ করার পর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

জানা গেছে, পুরো বাড়িটি ৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। মূল বাড়িটি নির্মাণ করেন মুক্তাগাছার মহারাজা সূর্যকান্ত। পরে তার দত্তক ছেলে শশীকান্ত প্রাসাদটি পুনর্নিমাণ করেন। কারণ সূর্যকান্তের নির্মিত প্রাসাদটি ভূমিকম্পে আংশিক বা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। শশীলজের মূল ভবনের সামনে আছে বাগান। সেই বাগানে ছিল ভেনাসের ভাস্কর্য।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।