বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পেতে উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে বিশ্বব্যাংক। জরুরি এ সহায়তা তহবিল থেকে করোনায় আক্রান্ত উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অনুদান, স্বল্প সুদে ঋণ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের এ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সচিবের নিকট একটি চিঠি দিয়ে এমন তাগাদা দেন। চিঠির একটি অনুলিপি অর্থ সবিচের নিকটও পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক প্রায় ১২ বিলিয়ন বা এক হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে ‘কান্ট্রি রেসপনস ফাস্ট ট্র্যাক ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’ নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। এ মর্মে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের এর বিকল্প নির্বাহী পরিচালকও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে অবহিত করেছেন।
যেহেতু এ ভাইরাস বিশ্বের অনেক দেশে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু এ তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার জন্য দেশসমূহের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বলছে, এ অর্থায়ন প্যাকেজ থেকে নিম্ন আয়ের দেশসমূহ অনুদান ও নমনীয় ঋণ এবং মধ্যম আয়ের দেশসমূহ আইবিআরডি ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হওয়ায় এবং করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকায় আইডিএ-এর নমনীয় ঋণ এবং আইএফসি থেকেও অর্থায়ন পেতে পারে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের ওই তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা গ্রহণের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত উপযুক্ত প্রকল্প প্রস্তাব জরুরি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে জয়েন্ট চিফ (প্লানিং) ডা. এ ই মহিউদ্দীন ওসমানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আমাদের ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটা ফান্ড দেবে। সেই জন্য প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজ শুরু করেছি। তারপর হাসপাতাল রেডি করার কাজও আছে— এসব বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী জুনশেষে বিশ্বব্যাংক এ ফান্ড অনুমোদনের জন্য তাদের বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব উঠাবে। তার আগেই আমাদের প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
এদিকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। গত ৩ মার্চ সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ওই যৌথ বিবৃতি দেন।
বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মানবিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্থা দুটি তাদের সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। তাদের বিশেষ নজর থাকবে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা জনগণের দেশগুলোর দিকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের বিদ্যমান সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করব। জরুরি অর্থ সহায়তা, পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তাও দেয়া হবে। দ্রুত অর্থ সহায়তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে কোনো দেশের সহায়তার আহ্বানে সাড়া দেয়া যায়।’
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বলেছে, সদস্য দেশগুলো নিজেদের জনগণের সহায়তায় সংস্থা দুটির কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করে, তা পূরণে তারা পুরোপুরি অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাত হাজার ৪৭৭ জন মারা গেছেন। ১৪৭টি দেশের এক লাখ ৮৬ হাজর ৯৯৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে দেশে আরও দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে পরীক্ষার পর এ দুজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেল। এনিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ জনে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে সারাদেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এমইউএইচ/এমএআর/এমএস