করোনা : বৈশাখে বাণিজ্য ক্ষতি ২০০০ কোটি টাকা
বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে প্রতিবছরই বাহারি রঙিন পোশাক আর নানা পণ্যের বেচাকেনায় চলে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু করোনা ভাইরাসের থাবায় এবার সব বিলিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বৈশাখী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ বছর নববর্ষ উপলক্ষে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। তাই করোনার আঘাত সরাসরি পড়েছে বৈশাখের বাণিজ্যে। এতে শুধু দেশীয় পোশাক খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বছরের দুটি বড় উৎসব ঈদ ও পহেলা বৈশাখ। এ সময়ে পোশাকের কেনাবেচা জমে উঠে। ফলে সারা বছরই এ দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে বিভিন্ন প্রস্তুতি। তৈরি করা হয় রঙ বেরঙের নতুন নতুন ডিজাইনের নানা পোশাক। যার প্রস্তুতি এবারও প্রায় শেষ। বেচাকেনায় জন্য চলছে নানা আয়োজন। এ মুহূর্তে এসে করোনা ভাইরাসের আঘাতে সব বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশাখী বাণিজ্য এবার শেষ। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পহেলা বৈশাখের পর ঈদ বাণিজ্যেও বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন দেশীয় ফ্যাশন উদ্যোক্তারা। তাই ব্যবসা বাণিজ্যের এ নাজুক পরিস্থিতিতে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ঠিক রাখতে সরকারের কাছে সহায়তা হিসাবে বিশেষ তহবিল চান খাত সংশ্লিষ্টরা।
দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে রয়েছে সাদাকালো, আড়ং, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, নিপুণ, প্রবর্তনা, রঙ, অন্যমেলা, বাংলার মেলা, ওজি, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নগরদোলা, দেশাল, নীলাঞ্জনাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব ব্র্যান্ডের ঈদ ও বৈশাখে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে নিজস্ব শোরুমেই বিক্রি করে। এছাড়া দেশীয় আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছোট বড় এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সরাসরি কাজ করেন। পরোক্ষ হিসাব করলে এ সংখ্যা আরও বেশি। করোনার প্রভাবে এ খাত সংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন থাকলে কর্ম হারাবেন শ্রমিক। পথে বসবে অনেক ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ড সাদাকালোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) সাবেক সভাপতি আজহারুল হক আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এ খাতের দুটি অংশ। একটি বিভিন্ন কারখানা বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকের মাধ্যমে প্রোডাকশন বা পণ্য তৈরি এবং অন্যটি সেল বা বিক্রি করা। এখন বিক্রি যদি বন্ধ থাকে তাহলে প্রোডাকশন অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বছরে বড় উৎসব ঈদ ও পহেলা বৈশাখ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা সারা বছরের লক্ষ্য ঠিক করি। এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে না। বৈশাখের সব প্রস্ততি আমরা নিয়েছি। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। ফলে এবার শুধু বৈশাখেই দেশীয় পোশাক খাতের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে যাচ্ছে।
দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডের এ উদ্যোক্তা জানান, দেশে এ খাতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে পাঁচ লাখের বেশি লোক সরাসরি কাজ করেন। তাঁতি, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ যদি পরোক্ষভাবে ধরা যায় তাহলে এ হিসাব আরও অনেক বেশি দাঁড়াবে। এ খাতের সঙ্গে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সরাসরি জড়িত। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর।
তাই বিশাল সংখ্যক এই কর্মী বাহিনীর খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা জরুরি উল্লেখ করে এফইএবি এর নেতা বলেন, আমরা এ খাতের সংকট সময়ে সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল চাচ্ছি। যাতে আগামী তিন মাস কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা না হয়।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে কী পরিকল্পনা করছেন জানতে চাইলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস শুধু দেশের নয় এটা বৈশ্বিক সমস্যা। এর ফলে পুরো ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা কর্মপন্থা নির্ধারণ করছি। এজন্য সেফটি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈশাখ আমাদের একটি বড় উৎসব এটা এবার বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ এ উৎসবে আমাদের বিক্রি শূন্যের কোটায় থাকবে। তাই আমরা বাৎসরিক বিক্রির যে টার্গেট নিয়েছি সেটা এবার পূরণ হবে না। স্বাভাবিকভাবে ব্যবসাও কমে যাবে।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কি করবেন জানতে চাইলে আড়ংয়ের এ কর্মকর্তা জানান, এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের সেফটি বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা। কারণ আগামী ১৫ দিন বা এক মাসে যদি এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে এ কদিনে যে ক্ষতি হবে এটা হয়তো দুই এক বছরে পুষিয়ে নেয়া যাবে। তবে যদি বর্তমান অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি থাকে তাহলে আমাদের জন্য সামনে কঠিন সময় আসবে।
তিনি বলেন, আড়ংয়ের পণ্যগুলো তৈরি হয় তৃণমূল থেকে। তাদের কাজ এখন প্রায় বন্ধ। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছি কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। আমরা তৃণমূলের কর্মীদের জীবন মান ঠিক রাখতে একটি প্যাকেজ প্ল্যান করছি। এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্টসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
এসআই/এএইচ/পিআর