উৎপাদনশীল খাতে গুরুত্ব দিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বিশেষ ঋণ সুবিধার নীতিমালা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা মোট ঋণের অন্তত ৫০ শতাংশ উৎপাদন উপখাতে বিতরণ করতে হবে। সেবায় ৩০ শতাংশ এবং ব্যবসা উপখাতে ২০ শতাংশ বিতরণ করা যাবে।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ মাঝারি শিল্পের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রধান করা হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ তহবিল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করা হবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ ঋণগ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।
এর পরই সিএমএসএমই ঋণ সুবিধা দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা ও পরিচালনার নীতিমালা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই খাতে একটি ব্যাংকের ২০১৯ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক স্থিতির ১০ শতাংশ ঋণ দিতে পারবে। সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও সেবা উপখাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবে মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পখাতের ট্রেডিং উপখাত এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। এ প্যাকেজের আওতায় একটি ব্যাংকের মোট ঋণের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে দিতে হবে। ৩০ শতাংশ মাঝারি শিল্পখাতে দেয়া যাবে। ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ দিতে হবে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে। বাৎসরিক মোট ঋণের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ গ্রাম অঞ্চলে দিতে হবে।
এ প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে কোনো একক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ এক বছর এ প্যাকেজের আওতায় সরকার থেকে ভর্তুকি পাবেন। কোনো ঋণখেলাপি বা খেলাপি হওয়ার পর তিনবার পুনঃতফসিল নিয়ে এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাবেন না। এখান থেকে ঋণ নিয়ে বিদ্যমান ঋণ সমন্বয়, কারখানা সম্প্রসারণ বা নতুন ব্যবসা চালু করা যাবে না। ইতিপূর্বে যেসব গ্রহীতা ঋণ নিয়েছেন তারা বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণ স্থিতির ৩০ শতাংশ অথবা গত তিন বছরের গড় পরিচালন ব্যয়ের ৫০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই হারে ঋণ পাবেন। ট্রেডিং খাতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ দেয়া যাবে।
এ প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে কোনো একক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ এক বছর এ প্যাকেজের আওতায় সরকার থেকে ভর্তুকি পাবেন।
ঋণ সুবিধার বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো ভুল তথ্য সরবরাহ করলে প্যাকেজের আওতায় কোনো সুদ ভর্তুকি বাতিল ও বিতরণ করা ঋণের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে। ঋণ অনাদায় হলে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী শ্রেণিকরণপূর্বক যথাযথভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারী উদ্যোক্তা করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এ বিষয়টি নিশ্চিত হবে তফসিলি ব্যাংক। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে।
এ প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ/বিনিয়োগের ব্যবহার যথাযথভাবে হচ্ছে কি-না, তা তদারক করার জন্য প্রতিটি ব্যাংক তাদের প্রধান কার্যালয়ের আওতায় একটি ‘বিশেষ মনিটরিং সেল’ গঠন করবে এবং বিষয়টি
নিয়মিত তদারকি করবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর ১৮ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এসআই/এইচএ/জেআইএম