করোনার থাবায় অন্ধকার দেখছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে সারাদেশ রয়েছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ। বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহনও। সব কিছু বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টও বন্ধ। দু-একটা খোলা থাকলেও ভোক্তা বা কাস্টমার নেই বললেই চলে।

এর মধ্যে কর্মচারীদের বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বিল ও নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের। আগামী সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। রমজান মাসে ইফতারি বিক্রি করে বেশ লাভ হয় হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোরে। এবার করোনার কারণে সে আশাও নেই। সব মিলিয়ে চোখে অন্ধকারে দেখছেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা। যদিও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজে ঋণ থাকছে রেস্টুরেন্ট খাতের জন্যও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার কারণে সারাবিশ্বেই রেস্টুরেন্টসহ ট্যুরিজম খাতের ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিশেষ করে আমরা বাংলাদেশে যারা রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা করি তাদের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত জানুয়ারি মাস থেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় মন্দা নেমেছে। আর গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে তো রেস্টুরেন্ট বন্ধই। বন্ধ থাকলেও কর্মচারীদের বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বিল ও নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মচারীদের খাওয়া ও বেতন পরিশোধ করা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক কর্মচারী গ্রামের বাড়িও যেতে পারেনি। তাদের থাকার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে। তারপরও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে আমরা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেকেই বেতন পরিশোধও করেছে, বাকিরাও পরিশোধ করবে।'

রোজায় ইফতারি বেচে রেস্টুরেন্টগুলো ভালো ব্যবসা করে উল্লেখ করে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘এবার ইফতারি নিয়েও অন্ধকারে আছি। আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কারও সাথে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়নি। ইফতারির জন্য ঢাকাবাসীর ৯০ শতাংশ মানুষ রেস্টুরেন্টের ওপর নির্ভরশীল। কিন্ত এখন আমরা এ পরিস্থিতে রেস্টুরেন্ট খুলে বাইরেও বসতে পারবো না।’

রুহুল আমিন বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে ফুটপাতে যদি ইফতারি বেচাকেনা শুরু হয় তাহলে ম্যাসাকার অবস্থা দেখা যাবে। এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কোনোভাবে ফুটপাতে ইফতারির বাজার বসতে দেয়া ঠিক হবে না। ৪০০ বছরের ঐতিহ্য চকবাজারের ইফতারির বাজারও কিন্তু ফুটপাতে বসে। তাছাড়া ঢাকার অলিতে-গলিতে ইফতারের বাজার বসে, এবার এসব বাজার বসলে এতোদিন লকডাউন দিয়ে করোনা বিস্তাররোধে আমরা যা অর্জন করেছি তা বিলীন হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকেই আমাদের ৯০ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে। আর এখন কর্মচারীও নেই। দেশে চলে গেছে, অল্প সংখ্যক আছে। তারপরও আমরা রেস্টুরেন্ট খুলতেই পারছি না। হোটেলের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা সম্ভব নয়। তারপরও কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট হোম ডেলিভারি সার্ভিস খোলা রেখেছে। এটা সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হবে।’

রেস্টুরেন্ট খাতের জন্য ঋণ দেয়ার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি বলেন, ‘এসব ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১২ এপ্রিল সার্কুলার ইস্যু করেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এখনো এটি বাস্তবায়ন শুরু করেনি। তাই আমরা চাই এ ঋণ কার্যক্রম ও কর্মচারীদের জন্য যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরাও কর্মচারীদের যথাযথ পাওনা বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে আল-কাদেরিয়া হোটেলের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম জানান, ঢাকায় তাদের চারটি শাখা রয়েছে। তবে কারোনার কারণে তিনটি শাখাই বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমিত আকারে একটি শাখা খুলে রাখা হয়েছে। খাওয়ার লোকের অভাব এবং করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে গিয়ে ওই শাখাতেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য শাখা বন্ধ থাকলেও কর্মচারীরা গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেনি, তাই তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, দিতে হচ্ছে বেতনও।

তবে লোকসান সত্ত্বেও কর্মচারীদের ঠিকমত বেতন দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান আল-কাদেরিয়া হোটেলের চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘করোনা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এ জন্য বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। আর বর্তমানে জীবন বাঁচাতে হবে আগে। ’

তিনি বলেন, মালিকরা সারাবছর ব্যবসা করেন। কিন্তু কোনো সমস্যা দেখা দিলেই কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তবে মালিকদেরও সঠিকভাবে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।

এমইউএইচ/এইচএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।