করোনা ঝুঁকিতেও খুলেছে মার্কেট-শোরুম, নেই ক্রেতা
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঝুঁকির মধ্যেও সীমিত আকারে খুলেছে বিভিন্ন দোকান ও শপিংমল। প্রথম দিন ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কম, বেচাকেনায়ও ছিল মন্দা।
রোববার (১০ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। রাস্তার পাশের কিছু দোকান এবং শোরুম খুলেছে। যেসব এলাকায় দোকান ও শপিং মল খুলেছে সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন পর দোকান-শোরুম খোলায় গোছগাছে ব্যস্ত অনেকে। কেউ পোশাক সাজাচ্ছেন আবার অনেকে ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন। করোনা আতঙ্কে ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনাও তেমন হয়নি বলছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর গুলিস্তান-টিকাটুলি এলাকায় বিভিন্ন মাকের্ট ও শপিং মল বন্ধ রয়েছে। তবে রাস্তার পাশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম খুলেছে। পোশাক ব্র্যান্ড ষোল আনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাদেশ আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় দেড় মাস পর শোরুম খুললাম। গোছগাছ করতেই দুপুর হয়ে গেছে। এখন বসে আছি, কোনো ক্রেতা নেই। দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত কোনো বিক্রিই হয়নি।
তিনি জানান, প্রাণঘাতী করোনায় প্রতিদিন আক্রান্ত বাড়ছে, মারা যাচ্ছে। আতঙ্কে মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। আমরা দোকান, শোরুম খুলেছি কারণ সামনে ঈদ। কর্মীদের বেতন-বোনাস দিতে হবে। তাদের তো পরিবার-পরিজন আছে। গত প্রায় দুই মাস কোনো ইনকাম নেই, উল্টো খরচ হচ্ছে। স্টকে মাল (পোশাক) পড়ে আছে। কিছু বেচাকেনা হলে বেতন-বোনাস দেয়া যাবে। তা না হলে এ সময় ঝুঁকি নিয়ে কে রাস্তায় বের হয়।
ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন ব্র্যান্ড সপ রেক্সের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয় কর্মী জানান, সকাল থেকে খুলে বসে আছি। ক্রেতা নেই বললেই চলে। দু-একজন লোক আসলেও তারা দেখে চলে যাচ্ছেন। করোনার আতঙ্ক রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন পর আজ প্রথম খুলেছে, তাই ক্রেতা কম। তবে দুই একদিন গেলে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা-প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে একটি শোরুমে পোশাক দেখছেন হাফিজ নামের এক ক্রেতা। তিনি জানান, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। অফিসের প্রয়োজনে পুরান ঢাকায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে শোরুম খোলা দেখে, ভেতরে ফাঁকা দেখে ঢুকলাম। ছোট বাচ্চা আছে তার জন্য পোশাক কিনব।
এদিকে রোববার (১০ মে) থেকে দোকান ও শপিং মল সীমিত আকারে খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস উদ্বেগজনক হারে বিস্তারের কারণে রাজধানীর বেশ কিছু বড় বড় শপিং মল ও মার্কেট ঈদের আগে বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। তবে আবার বেশকিছু মার্কেট খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষেয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সীমিত আকারে মার্কেট ও দোকানপাট খোলার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ইসলামপুর, উর্দু রোড়, এলিফ্যান্ট রোডসহ কিছু কিছু মার্কেট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা আগমন কম, তাই বেচাকেনাও কম হয়েছে।
কর্মীদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্ধ থাকা দোকান ও বাণিজ্যিক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেয়ার কথা বলেছি। এ মুহূর্তে আমদের আর্থিক সংকট রয়েছে। তারপরও মালিকরা যতটুকু পারেন কর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন।
এর আগে গত ৪ মে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১০ মে থেকে দোকান ও শপিং মল সীমিত আকারে খোলার অনুমতি দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সীমিত আকারে মার্কেট ও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। তবে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। বড় বড় শপিং মলের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও স্যানিটাইজার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে আগত যানবাহন অবশ্যই জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিকেল ৪ টার মধ্যে দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ করতে হবে।
এর আগে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শপিং মলও বন্ধ রাখতে বলা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ পর্যাক্রমে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
এসআই/এমএফ/এমএস