করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তরের পরামর্শ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ২৭ জুন ২০২০

অডিও শুনুন

করোনাভাইরাস মহামারি থেকে সৃষ্ট বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করা এবং যথাযথ পুনরুদ্ধার ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সঠিক পথে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সত্যিই বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের কালো মেঘ ডেকে এনেছে, তবে মেঘের মধ্যেই রোদ থাকে, যা বাংলাদেশকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

‘ইমপেক্ট অব কোভিড-১৯ অন বাংলাদেশ: প্রগনোসিস ফর রিকভারি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের এসব কথা বলেন তারা। কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (আইএসএএস) প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত সমাজকর্মী রাশেদা কে চৌধুরী, ইউনির্ভাসিটি অব ডেনভারের জোসেফ কোরবেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অর্থনীতির বিশিষ্ট অধ্যাপক হায়দার এ খান, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এবং সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সামিট হোল্ডিংস লিমিটেড এবং আইপিসিও ডেভলপমেন্টস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান অংশ নেন।

আলোচকরা বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতি, নারী, শিক্ষা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, তৈরি পোশাক খাত এবং দেশের অবকাঠামো ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং পুনরুদ্ধারের প্রাক্কলন নিয়ে আলোচনা করেন। এতে সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান।

ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির পুনরুদ্ধার হবে উল্লেখ করে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি সতিই বিশ্বব্যাপী এক বিপর্যয়।’

যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তরিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, এটি বিশ্বব্যাপী মহামারি এবং বাংলাদেশ সরকার কোনো সময় নষ্ট না করেই এতে খুব দ্রুত সাড়া দিয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাব তুলে ধরেন। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির সাথে দেশের অর্থনীতি সুসংহত।

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এখন অনেক বেশি আর্থিক সংস্থান এবং নগদ টাকা স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে, কারণ অনেক মানুষের তা প্রয়োজন হবে, যাতে ‘নীতিনির্ধারকরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন’। জায়েদী সাত্তার রপ্তানি বৈচিত্র্য, আরও বিনিয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য ভারসাম্যমূলক প্রণোদনা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

ড. রুবানা বলেন, এটি প্রায় দুঃস্বপ্নের মতো ছিল এবং ৩.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর তাদের যাত্রা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাতিল বা স্থগিত হওয়া আদেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ তারা পুনরুদ্ধার করেছেন, তবে অর্থ প্রদানের শর্ত এখনও অস্পষ্ট।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের মধ্যে শিক্ষাগত ঘাটতির কথা তুলে ধরে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন ড. রাশেদা।

তিনি বলেন, ‘এর জন্য একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিনিয়োগ থাকতে হবে এবং আমাদের ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনতে হবে।’

ড. রাশেদা আরও বলেন, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরে টেলিভিশন পাঠ, অনলাইন ক্লাস, রেডিও সম্প্রচার এবং মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার ক্ষতি হ্রাস করার চেষ্টা করছে। শিক্ষামূলক কার্যক্রমের অভাবে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেন ড. রাশেদা।

করোনা পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ ও চাহিদা শৃঙ্খলা উভয় ক্ষেত্রে একযোগে বিঘ্ন ঘটছে বলে নিজ পর্যবেক্ষণের কথা জানান কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী যুগের বিশ্ব ভিন্ন হবে এবং বিভিন্ন উপায়ে সংকট পুনরুদ্ধার হবে।

নাহার খান বলেন, কোভিড-১৯ একটি অব্যাহত চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে যা প্রতিনিয়ত মোকবিলা করার প্রয়োজন পড়বে।

জেপি/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।