শেয়ারপ্রতি ৪৪ টাকা দেবে ইউনিলিভার কনজ্যুমার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে নগদ ৪৪ টাকা করে পাবেন।
কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম পাল্টে ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’ নাম ধারণের পর এই প্রথম কোম্পানিটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাল।
লভ্যাংশের বিষয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৯ এপ্রিল। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ মার্চ।
সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) করেছে ৪৩ টাকা ৯৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২৩ টাকা ৮ পয়সা।
ডিএসই জানিয়েছে, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। অর্থাৎ শেয়ার দাম যত খুশি বাড়তে পারবে।
তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্ধারিত সীমার নিচে শেয়ার দাম নামতে পারবে না।
হরলিকস, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইনের মতো পণ্য নিয়ে দেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়।
কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।
এরপরেই ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। এ সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সে সময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।
প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ২২ মার্চ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে গত ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’।
নাম বদল হলেও ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটেগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়।
নতুন নামে ও নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় ২ হাজার ৭৪২ টাকা থেকে কয়েক দফা দাম বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এমএএস/এসএস/জিকেএস