দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে তরুণদের নতুন জোট

দেশীয় অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে তরুণদের সংগঠন ইয়ুথ পলিসি ফোরামের (ওয়াইপিএফ) উদ্যোগে ‘কোয়ালিশন ফর আপগ্রেডিং বাংলাদেশ ইকোনমি (সিইউবিই)’ নামে নতুন একটি জোট গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর এমসিসিআই মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমরা এই মুহূর্তে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, যা কৃষি, ইলেকট্রনিক্স, স্বয়ংচালিত ও ডিজিটাল অর্থনীতি খাতে বিপুল সুযোগ নিয়ে আসছে। যদিও শ্রমের মূল্য ও মজুরির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান রয়েছে, তবে প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান ও ব্যবসায়িক সূচকের দিক থেকে আমাদের অবস্থান বর্তমানের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
তারা আরও বলেন, আমাদের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রপ্তানি বৈচিত্র্যেরও অভাব রয়েছে, যা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশকে সামনের দিকে আরও অনুকূল করে তোলার জন্য একটি অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও প্রকৃত অগ্রগতির জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত নির্দিষ্ট সমস্যা খুঁজে তা সমাধানের সঠিক নির্দেশনা দেওয়া।
স্বাগত বক্তব্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাটনিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন বলেন, আপগ্রেড করার অর্থ শুধু প্রযুক্তিগত অংশের সন্ধান করা নয়, এটি অভিজাত ও রাজনৈতিক অংশকে আপডেট করাকেও নির্দেশ করে।
‘এখানে রাষ্ট্রের নিজস্ব সচেতনতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে আপনার রাষ্ট্র আলাদা। তাই আপনার জানতে হবে কোথা থেকে শুরু করা উচিত। আপনি প্রথমেই স্বচ্ছতার দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন।’
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়াস বা ওরিয়েন্টাল স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক খান বলেন, রাষ্ট্রের আসল ব্যর্থতা হল শৃঙ্খলার ব্যর্থতা। আমাদের দেশে ক্ষমতার বণ্টনের পার্থক্যের কারণে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে শিখতে পারি না। শ্রমিক ও মেশিন এবং সাংগঠনিক উৎপাদনশীলতা কীভাবে সংগঠিত করা যায়- তা জানা কঠিন।
ইউনিলিভারের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা কীভাবে আমাদের দেশীয় অর্থনীতির উন্নতিতে প্রভাব ফেলতে পারে? দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় বৃহত্তম কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এমন আলোচনার প্রেক্ষিতে ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও জাভেদ আখতার বলেন, এ ধরনের জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এতে কাজগুলো আরও বৃহৎ পরিসরে করা যায়।
দেশীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধনে অর্থবহ ভূমিকা রাখার জন্যে ওয়ালটন কী পরামর্শ দেবে সবাইকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়ালটনের সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, আমরা যে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন করতে সক্ষম, এই বিশ্বাস ও মানসিকতা থাকতে হবে। নীতি প্রণয়নের সময় প্রধান শিল্প কারখানার সদস্যদের উপস্থিত থাকতে হবে।
আলোচনায় সমাপনী বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, যেহেতু অর্থনীতির বিকাশ হবে, শ্রমিকরা উচ্চতর প্রণোদনা চাইবে। তাই আপনি খুব বেশি দিন সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর করতে পারবেন না। উদ্যোক্তারা যদি নতুন পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিতে না পারে, তবে এটি কঠিন হবে। কারণ এই পরিবর্তনে অনেক কিছু অপ্রচলিত হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন উদ্যোক্তারা অনেকই উচ্চশিক্ষিত এবং তারা জানে তারা কী করতে চায়। তারা জোর দেয় আইনকে স্বচ্ছ করার জন্য এবং তারা আরও দক্ষতা অর্জন করতে চায়। প্রযুক্তি ও মেশিন আমদানি করা যেতে পারে কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করার জ্ঞান, প্রতিশ্রুতি ও দক্ষতা এর সঙ্গে আসে না। এটি গড়ে তুলতে হবে।
ইএআর/এমপি