অনলাইন পাঠদানের বাইরে ৭৬ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মরণ ছোবল প্রত্যক্ষ করছে সারাবিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস-আদালত। প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য আপাতত বন্ধ। হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান এবং কাঁচা শাকসবজির দোকান সীমিত সময়ের জন্য খোলা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থাৎ স্কুল-কলেজ-মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ আছে।
এমতাবস্থায় শিক্ষাকার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই আশঙ্কা থেকে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের আওতায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস দেশব্যাপী সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ইউজিসি’র নির্দেশনা মেনে দেশের ৬৫টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম চালু করেছে। সারাদেশে বর্তমানে মোট ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান। অর্থাৎ ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় না গিয়ে তাদের সব কার্যক্রম তালাবন্দি করে রেখেছে।
সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস শুরু
ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে দুই দফায় নির্দেশনা দেয়া হয়। কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ওই নির্দেশনা মেনে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে।
অনলাইন পাঠদান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন, কবে থেকে শুরু করা হয়েছে, কতজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন— এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চাওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে ইউজিসি থেকে দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি দেয়া হয়।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য চাইলে সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দু’দফা চিঠি দিলেও প্রথম দফায় ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৩২টি বেসরকারি ও ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
এরপর তিনদিনের সময় দিয়ে আবারও এ বিষয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ই-মেইল করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ দু’দফায় ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ইউজিসির কাছে পৌঁছেছে।
সারাদেশে ৯৫টি বেসরকারি ও ৪৬টি সরকারি— মোট ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান থাকলেও ৬৫টিতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান জাগো নিউজকে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছে সে তথ্য পাঠাতে চিঠি দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য চাওয়ার পর আমরা দু’দফায় রেজিস্ট্রারের ই-মেইলে চিঠি পাঠায়। চিঠির ভিত্তিতে ১৩টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে বাসায় বসে আছেন। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম গ্রহণ করেননি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে তা সমন্বয় করে আগামী রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে এর মধ্যে যদি কেউ নতুন করে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠান তাও যুক্ত করা হবে।
এমএইচএম/এমএআর/এমকেএইচ