করোনা : বিশেষ শিশুদের ভিটামিন সি বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। প্রায় অর্ধলাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মানুষকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি বেশি বেশি করে খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন। খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ফারহানা বেগম এক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে বলছেন বিশেষ শিশুদের প্রতি। তিনি করোনার এই দুঃসময়ে বিশেষ শিশুদের বেশি করে ভিটামিন সি খাওয়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন।

জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিউট্রিশনিস্ট ফারহানা বেগম বলেন, আমাদের হসপিটালের যে সিডিসি ক্লিনিক সেটির সাথে আমরা অটিজমের কাজ করে থাকি। অটিজমের রোগীগুলোকে আমিও দেখে থাকি। আমরা গ্রুপ-ওয়াইজ কাজ করি। সেখানে আমাদের চাইল্ড ডেভেলপমেন্টের ডাক্তার আছেন। আমাদের সাইকোলজিস্ট আছেন। আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন। আর আমি আছি অবশ্যই। যেহেতু এপ্রিলের ২ তারিখে আমাদের অটিজম সচেতনতা দিবস। এই দিবসে আমরা প্রতি বছর একটা সেমিনার করি। কিন্তু এই বছর পুরোবিশ্ব একটি ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে এবার এটা আমরা করতে পারছি না।

তিনি বিশেষ শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, অটিজমে ভোগা বাচ্চারা আসলে খুবই নাজুক থাকে। যেহেতু আমি খাবারটা দেখি, সেহেতু দেখা যায় তাদের জন্য অনেক খাবার খুব রেস্ট্রিকটেড থাকে। যেমন ল্যাকটস-ফ্রি খাবার খেতে হবে, কেজিন-ফ্রি খাবার খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার খেতে পারবে না। এখন একটা বাচ্চাকে আমি যদি বলি যে তুমি রুটি খাবে না, বিস্কুট খাবে না, এটা আসলে একটা বাচ্চার জন্য মেনে নেয়া কঠিন। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে প্যাশেন্টরা এসে বলেন যে, আপু তাহলে আমরা কী করতে পারি? তখন আমরা যেটা করতে পারি যে নিউট্রেন্টের বদলে চালের গুঁড়ার কোনো কিছু তৈরি করে দিতে পারি। বিস্কুটের বদলে আমরা যেমন চালের গুঁড়ার একটা পিঠা দিচ্ছি। একটা বিস্কুট করে দিতে পারি। নুডলস বাচ্চাদের খুব পছন্দের খাবার। সেক্ষেত্রে হয়তো আমরা একটা রাইস নুডলস দিচ্ছি। ভেজিটেবলও দিতে পারি। কিছু কিছু অটিজম বাচ্চার হাইপার থাইরয়েডের প্রবলেম থাকে। তাদের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হয় আমাদের। যেহেতু তারা দুধ বা দুধের তৈরি কোনো খাবার খেতে পারছে না, তাহলে এ অভাব পূরণ হবে কী দিয়ে? তখন আমরা তাদের খাবারে ফ্যাটি-অ্যাসিড জাতীয় খাবার যেগুলো আছে সেগুলো তাদের সাজেস্ট করে থাকি।

ফারহানা বেগম বলেন, এখন যেহেতু করোনাভাইরাসের একটা সময় যাচ্ছে, আমরা সবাই আতঙ্কিত, সবাই সেফ থাকার চেষ্টা করছি। ওদের নিয়ে তো আরও বেশি চিন্তা। অটিজম বাচ্চারা তো আরও বেশি নাজুক। ওদের তো আরও বেশি টেক-কেয়ার করতে হবে। তাদের মা-বাবাদের আমি অবশ্যই বলব, খুবই বেশি পরিমাণে ফ্লুইড ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি করে বানিয়ে দিতে। তবে আমরা অনেকে ভিটামিন সি বলতে বুঝি লেবুর শরবত। শরবতের মধ্যে কিন্তু চিনি দেয়া যাবে না। ‘র’ শরবত দিতে হবে। লেবুটা খেলেও অবশ্যই ‘র’ দিতে হবে। কমলা লেবুর জুস খেলেও ‘র’ খেতে হবে। ওটাতে পানি মেশালে চিনির প্রশ্ন আসবে, তাই ওটাতে পানি মেশানো যাবে না। এভাবে আমরা ডায়েটটা করে থাকি।

‘আর এখন যেহেতু বাচ্চারা একটু রোদে যেতে পারছে না, ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকে। তাই এই বাচ্চাদের আমরা বারান্দায় বা জানালার কাছে যেখানে একটু রোদ আসে সেখানে একটু ১০-১৫ মিনিট রাখতে পারি, সেখানে তারা যেন বোর ফিল না করে, এজন্য তার সঙ্গে একটু খেলাধুলা করা। এটা আমরা করতে পারি। ক্যালসিয়াম জাতীয় প্রধান যে খাবার, দুধটা তারা পাচ্ছে না, ফলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিটাও হতে পারে। তখন এ ক্যালসিয়াম পূরণের জন্য্ আমরা শাক-সবজি বেশি করে খাওয়াতে পারি। এর পাশাপাশি স্যুপ ও চিকেন খাওয়াতে পারি। ব্রোকলি খুবই ভালো ক্যালসিয়ামের জন্য। ব্রোকলির স্যুপটাও আমরা দিতে পারি। তবে হাইপার-থায়রোডিজমের সমস্যা থাকলে অবশ্যই এই বাচ্চাদের ব্রোকলি দেয়া যাবে না।’

কেএইচ/এইচএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।