করোনায় বয়স্কদের জন্য যা করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কী করণীয় আর কী করা যাবে না, এ নিয়ে দুইজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশ্লেষণ করেছেন।
তাদের একজন ডা. এম এস শেষাদ্রি। তিনি তামিলনাড়ুর ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও এনডোক্রোনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের প্রধান। বর্তমানে তিনি তামিলনাড়ুর রানিপেটে তিরুমালাই মিশন হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। অপরজন হলেন ডা. টি জেকব জন। তিনি ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ক্লিনিকাল ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান।
ভারতীয় গণমাধ্যমে লেখা তাদের বিশ্লেষণটি নিচে তুলে ধরা হলো-
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সারা পৃথিবীর মৃত্যুর লেখচিত্র দেখাচ্ছে মৃত্যুহার তাদেরই বেশি, যারা বয়স্ক এবং যাদের আগে থেকেই অসংক্রমক কিন্তু ক্রনিক অসুখ রয়েছে।
মৃত্যুহার বাড়তে শুরু করেছে ৫৫ বছর থেকে এবং বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রাফ আরও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে, বয়স্ক ও দীর্ঘদিনের হৃদরোগী, ডায়াবেটিস রোগী ও দীর্ঘদিনের ফুসফুসের রোগীদের মৃত্যুহার বেশি।
এই মহামারি চলে যাবার আগে বিশ্বের জনসমুদয়ের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। যে কোনও সংক্রমক রোগের মহামারির ইতিহাস এমনটাই বলে।
অল্পবয়সীদের মধ্যেই এই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অধিকাংশেরই কোনও রোগলক্ষণ থাকবে না বা সামান্য শ্বাসজনিত সমস্যা হবে, যা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
তবে, সমস্যা হরো তারা এই সংক্রমণ বাড়ির বয়স্ক ও ঝুঁকিপ্রবণ সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন। ছড়িয়ে দেবেন কাজের জায়গায় বা সামাজিক ও ধর্মীয় জমায়েতে। এমনকি চারপাঁচজনের ছোট গ্রুপেও।
মনে রাখতে হবে, বয়স্ক ও ক্রনিক অসুখের জেরে ঝুঁকিপ্রবণদের SARS-CoV-2 ভাইরাস আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। যদি এই মহামারির সময়ে তাদের আলাদা করা যায়, তাহলে এই রোগের হাত থেকে পার পেয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। এ ধরনের আইসোলেশনকে রিভার্স কোয়ারান্টিন বা কোকুনিং (cocooning) নামে অভিহিত করা হচ্ছে।
কীভাবে এ কাজ করতে হবে? কী করণীয় আর কী নয়?
সবচেয়ে আগে, সবচেয়ে সহজে যেটা করা সম্ভব এই মানুষদের বলা তারা যাতে সংক্রমিত না হন। তাদের সেরকম একটা জীবনযাত্রার মধ্যে চলে যেতে বলা। তাদের পরবর্তী কয়েকমাস, মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কঠোরভাবে বাড়িতে থাকতে বলতে হবে। সরকারি পেনসন, রেশন, বিনামূল্যের ওষুধ ইত্যাদি সবই তাদের বাড়িতে ডেলিভারি দিতে হবে।
তাদের শারীরিক মানসিক চাহিদা মেটাতে হবে পরিবারের সদস্যদের। স্বাস্থ্যের সমস্যা মেটাতে হবে টেলিফোনে। তাদের সঙ্গে কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখা করতে দেয়া যাবে না, জ্বরাক্রান্ত কাউকেও নয়। তাদের সবসময়েই মাস্ক পরে থাকতে হবে। এমনকি বাড়ির লোক বা কাজের লোকের সঙ্গে কথা বলবার সময়েও।
তারা একেবারেই কোনও জমায়েতে যাবেন না, কিন্তু সামাজিকভাবে অন্যদের সঙ্গে টেলিফোন ও অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। সময় কাটাবার জন্য তারা ইন্ডোর গেম, পড়া, ছবি আঁকা, বাগান করা, বাজনা বাজানোর মতো কাজ করতে পারেন।
পরিবারের শিশুদের সঙ্গেও তারা সময় কাটাতে পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্তত ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ, স্কুল থেকে শিশুরা সংক্রমণ নিয়ে আসতে পারে। তাদের সামনে সবারই মাস্ক পরা উচিত।
তাদের সবারই বারবার হাত ধোয়া অভ্যাস করতে হবে। বিশেষ করে ওয়াশ বেসিন, পানির কল, দরজার হাতল বা লিফটের বোতাম টেপার পর। হাত ধোবার সময়ে পানির কলও ধুয়ে মুছে নিতে হবে।
দরজা খোলবার সময়ে তারা যদি পেপার ন্যাপকিন বা রুমাল ব্যবহার করেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। অন্য কোনও পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোন তাদের ব্যবহার করা উচিত নয়।
তাদের শৌচাগারের উপকরণগুলো আলাদা হলে ভালো হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘর ও বাথরুম সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন বা সাবান পানি দিয়ে মোছা দরকার।
তাদের পৃথক বাথরুম বা টয়লেট থাকলে ভালো হয়। যদি অন্যদের সঙ্গে বাথরুম শেয়ার করতে হয় তাহলে তা ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়া উচিত।
অনেক বয়স্ক মানুষ একা থাকেন, তাদের পরিবারের মধ্য থেকে বা বাইরে থেকে কেয়ারটেকারের প্রয়োজন। এই কেয়ারটেকারদের বয়স চল্লিশের নিচে হলেই ভালো। কেয়ারটেকারকেও মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিকভাবে সাহায্যের পর খুব ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
কেয়ারটেকার নিজে বা তার পরিবারের কেউ যদি জ্বর জ্বর বোধ করেন, তাহলে তিনি চার সপ্তাহ কাজে আসবেন না। সুস্থতার পর থেকে এই সময় শুরু হবে। এই সময়ে অল্পবয়সী কোনও আত্মীয় বা পারিবারিক বন্ধু দায়িত্ব নিতে পারেন।
বয়স্ক ও ঝুঁকিপ্রবণদের সুরক্ষা দেবার শ্লোগান বর্তমানে সুপ্রযোজ্য এবং কোভিড ১৯ আটকানোর বাস্তবোচিত কৌশল।
জেডএ/জেআইএম