মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দিতে হবে
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে অগ্রবর্তী যোদ্ধা হিসেবে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। বর্তমানে প্রতিদিন রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে শত শত নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তাদেরই মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হওয়ার তীব্র ঝুঁকি নিয়ে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগী শনাক্ত করছেন তারা কাজের তেমন স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুখে সমরযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক ও নার্সদের কথা ঘুরে-ফিরে এলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কথা কেউ বলে না বলে আক্ষেপ রয়েছে তাদের।
এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. সেলিম মোল্লা। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, কেবল এই করোনা দুর্যোগ নয়, যেকোনো স্বাস্থ্য মহামারিতে আড়ালে কাজ করে যাওয়া মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা তাদের কাজের স্বীকৃতি চান।
সেলিম মোল্লার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি পর্যায়ে বর্তমানে সারাদেশে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাবরেটরি) সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৫০০। আদালতে মামলা-মোকদ্দমার কারণে ২০১৩ সালের পর থেকে নতুন করে আর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হয়নি। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল টেকনোলজির বিভিন্ন কোর্স থেকে পাশ করে বেকার হয়ে বসে আছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।
জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের অধিকসংখ্যক নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সীমিত সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে এ মুহূর্তে সুচারুরূপে কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় জানতে চাইলে সেলিম মোল্লা বলেন, সরকার চাইলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেকার টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দিয়ে কাজে লাগাতে পারে।
তিনি করােনাভাইরাসে আক্রান্ত রােগী শনাক্তকরণে মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা সংক্রান্ত জারিকৃত পরিপত্রে তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান।
স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক প্রতিনিয়ত প্রচারিত হেলথ বুলেটিনে অন্যান্য পেশাজীবীদের সাথে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কথা সঠিকভাবে উল্লেখ করা, করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে যেসব মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা এবং কর্মরতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্য সেবায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করারও দাবি জানান সেলিম মোল্লা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে করােনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সাথে সাথে মেডিকেল টেকনােলজিস্টরা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা রোগী শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন।
করোনা মােকাবেলার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রণােদনা ও স্বাস্থ্য বীমা ঘােষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণােদনা প্রদান সংক্রান্ত পরিপত্রে মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের নাম না থাকা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, করােনাসহ অন্যান্য রােগ নির্ণয়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেডিকেল টেকনােলজিস্টরা মুখ্য ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। মেডিকেল টেকনােলজিস্টরাই সর্বপ্রথমে রােগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রােগ নির্ণয়ের প্রতিবেদন দেয়ার পর চিকিৎসক চিকিৎসা এবং নার্স সেবা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসাসেবায় শুধু ডাক্তার ও নার্সকে মূল্যায়ন করা হলেও মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের অবদানকে কখনাে মূল্যায়ন করা হয় না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শুধু ডাক্তার ও নার্সদের কথাই বলা হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করােনা মােকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ প্রতিনিয়ত দেশবাসীকে অবহিত করে আসছেন। সেখানে অন্যান্য পেশাজীবীদের অবদানের কথা উল্লেখ করা হলেও মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের কথা বলা হচ্ছে না। কখনােবা উল্লেখ করা হলেও তা ভুল পদবি হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, যা মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের জন্য অমর্যাদাকর।
এমতাবস্থায় সেলিম মোল্লা আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেডিকেল টেকনােলজিস্টদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে।
করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এমইউ/এইচএ/এমকেএইচ