গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধে আইনি নীতিমালা প্রয়োজন

মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের ব্যবহার বন্ধে তাই নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
রোববার (২২ মে) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা। মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং জীবনাচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। মোবাইল ফোনে অতিমাত্রায় আসক্তি ও অতিরিক্ত ফাস্টফুডজাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম। তিনি বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বড় অংশ বিক্রি হচ্ছে ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া। রোগীর একটু পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিলে ফার্মেসি থেকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে একটু পানি পান করালে বা হালকা কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে এ সমস্যা সমাধান করা যেত।
‘দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনাপত্র ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার, স্মৃতিভ্রমের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে আসতে পারে।’
অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম আরও বলেন, রোগীর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপনা লিখতে হবে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অতিমাত্রায় এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার কমাতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে বিএসএমএমইউ
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যখন ইচ্ছা তখন ওষুধ কেনা সম্ভব নয়। বছরে তিনবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে পারবেন। এর বেশি আপনি কিনতে পারবেন না। কারণ ওখানে সবকিছু রেকর্ড থাকে আর এর বিল দেয় বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠান।
যদি আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিমা থাকতো, ওষুধ বিক্রি ও কেনা এবং তদারকি করা সম্ভব হতো, তাহলে এই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের অতিরিক্ত বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো- যোগ করেন অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম।
সেমিনার আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু কান্তি সিনহা, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজ প্রমুখ।
এএএম/কেএসআর/জেআইএম