ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের চিকিৎসায় সুখবর দিল সুইস বায়োটেক

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর প্রায় ৩৩ শতাংশ রোগীর চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে অনেক রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে আসে এবং একপর্যায়ে স্থায়ী অন্ধত্বের দিকে অগ্রসর হয়।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএমই আক্রান্ত রোগীর এক নতুন আবিষ্কার এবং চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটি এবং রোশ বাংলাদেশ আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বক্তারা এ কথা জানান।
সম্মেলনে দেশের অর্ধশতাধিক চক্ষুবিশেষজ্ঞ অংশ নেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ফ্লোরিডার স্ট্যাফ ফিজিসিয়ান অধ্যাপক ডা. রিশি পল সিং। তিনি ডিএমই এবং এএমডি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি, নতুন আবিষ্কৃত ওষুধ ও বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আই হসপিটালের কনসাল্ট্যান্ট ভিট্রিও রেটিনা সার্জন ডা. নিয়াজ আবদরু রহমান বাংলাদেশে ডিএমই এবং এএমডি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বদ্ধিৃ পাওয়ায় ডায়াবেটিক ম্যাকুলার ইডিমা (ডিএমই) রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে রোগী, পরিবার এবং সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই রোগের চিকিৎসা দেশে সীমিত পর্যায়ে চালু থাকলেও সহজলভ্য নয়। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসায় স্থায়ী অন্ধত্ব এড়ানো সম্ভব।
সুইস বায়োটেক প্রতিষ্ঠান রোশ’র সাম্প্রতিক গবেষণায় একটি নতুন চিকিৎসা আবিষ্কার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, এই নতুন আবিষ্কার এই রোগে আক্রাদের চিকিৎসাসেবাকে সহজ করবে।
ডা. নিয়াজ আবদরু রহমান বলেন, আমাদের কাছে আসা রোগীদের মধ্যে ডিএমই এবং এএমডি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বদ্ধিৃ পাচ্ছে। এই রোগীদের স্থায়ী অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে এর চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করতে হলে সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার প্রথম এবং একমাত্র ওষুধ যা এনজিওপয়েটিন-২ এবং ভিইজিএফ-এ উভয় ক্ষেত্রে কাজ করবে। এনজিপয়েটিন-২ এবং ভিইজিএফ-এ চোখের রেটিনার রক্তনালি সংক্রান্ত রোগের অন্যতম প্রধান অনুঘটক।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে জানা যায়, চোখের এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধের ডোজের অন্তর্বর্তীকালীন চার মাস পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব। যার ফলে রোগীদের হাসপাতালে যাতায়াত এবং আনুষঙ্গিক খরচ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করা সম্ভব এবং রোগীর জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব। এছাড়াও এর ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে, যা চিকিৎসকদের অধিক রোগীকে সেবাদানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে।
এসময় বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটি এবং অফথামোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. তারিক রেজা আলী বাংলাদেশে ডিএমই আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির উদ্যোগ তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে রোশ বাংলাদেশ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আফরোজ জলিল বলেন, বাংলাদেশে অন্ধত্বের হার হ্রাস করতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণের অবদান অনস্বীকার্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই অগ্রযাত্রা অব্হোত রাখতে হবে। তাই ডিএমই’র ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিরোধ এবং যথাযথ স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
এএএম/ইএ/জেআইএম