কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি ও দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ প্রকৃতি দেখে বিমুগ্ধ সবাই। নৌকায় চড়ে হাওরের বুকে ঘুরে বেড়ানো, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ—সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
Advertisement
সোমবার (৯ জুন) দুপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে নিকলী বাঁধ। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন আনন্দঘন সময় কাটাতে। কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে একাই ছুটে এসেছেন হাওরের এ অপরূপ প্রান্তরে।
গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নিকলী হাওর পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এর প্রভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। বিশেষ করে কয়েক হাজার নৌকার মাঝি ও ব্যবসায়ী পরিবার এ পর্যটনকেন্দ্র ঘিরেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নিকলী বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০০০ সালের দিকে। উপজেলা সদরকে ভাঙন থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁধ এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, হয়ে উঠেছে একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট।
Advertisement
উপজেলার ছাতিরচর এলাকার ভাঙন ঠেকাতে করচগাছ রোপণের ফলে অঞ্চলটির প্রাকৃতিক দৃশ্য আরও নয়নাভিরাম হয়েছে। বর্ষাকালে তাই হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিকলী হয়ে উঠেছে দেশের নানা প্রান্তের মানুষের অন্যতম গন্তব্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহনে করে দলবেঁধে বেড়িবাঁধে আসছেন। কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন, কেউবা নৌকায় চড়ে ঘুরছেন হাওরের বুকে। এর ফলে স্থানীয় নৌকার মাঝি, ট্রলার মালিক এবং হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসাও জমে উঠেছে।
স্থানীয় মাঝি সাদেক মিয়া বলেন, ‘সারা বছর আমরা বর্ষার অপেক্ষায় থাকি। তখন হাওরে পানি আসে, আর পর্যটকরাও আসেন। গতকাল আর আজকে পর্যটকদের হাওরে ঘুরিয়ে বেশ ভালো আয় হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক নাদিরা বেগম বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার। বেড়িবাঁধ এলাকা আরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে ঘুরে আরও বেশি আনন্দ পাওয়া যাবে।’
Advertisement
নিকলী সদরের বাসিন্দা ও জেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবু তাপস কুমার সাহা অপু বলেন, ‘বর্ষাকালে এ উপজেলায় প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভর করে জীবন চালান। তাই স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক এবং রাজনৈতিক মহল সবাই মিলে পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকেন।’
এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানা মজুমদার মুক্তি বলেন, ‘নিকলীকে কেন্দ্র করে পর্যটনের উন্নয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি পর্যটন ব্যবস্থাপনার সার্বিক দিক তদারকি করবে।’
এসকে রাসেল/আরএইচ/এমএস