দেশজুড়ে

আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান, শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান, শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

পাবনায় আগাম বন্যার পানিতে বড়াল ও গুমানী নদীসহ কয়েকটি নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ফলে ডুবে গেছে চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের ধান। এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমি শ্রমিকের সংকট থাকায় তাড়াহুড়ো করে ধান ঘরে তোলা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

Advertisement

কৃষকরা জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল, চিকনাই, গুমানী, আত্রাই, ও হান্ডিয়াল কাটা নদীসহ বিভিন্ন বিলে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের জমিতে থাকা পাকা ইরি-বোরো ধান ডুবে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

তারা আরও জানান, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে মৌসুমি শ্রমিক বাড়ি চলে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়ও মিলছে না কৃষি শ্রমিক। এতে পানিতে ডুবে ফসল নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, সিদ্ধিনগর, দরাপপুর, স্থল, নবীন, পাকপাড়া, নিনাইচড়া ইউনিয়নের দিবগাড়ি, দিয়ালগাড়ি, মিয়াপাড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার কয়ড়া, টয়রা, বাঁশবাড়িয়া, বাটুল, আদা বাড়িয়া ও সাতবাড়িয়া বিলে পানিতে নেমে ধান কাটছেন কৃষক। আবার কেউ কেউ নৌকা বা বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো পলিথিনের নৌকা দিয়ে বিল থেকে সড়কে নিয়ে আসছে ধান। বন্যার পানি থেকে ফসলকে রক্ষা করতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তারা।

Advertisement

ক্ষেতেই ধান নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে হান্ডিয়াল সিদ্ধিনগর এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, এ বছর ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বন্যার পানিতে ক্ষেতেই ধান নষ্ট হচ্ছে। সাধারণত জমিতে বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান হলেও বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় এখন বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ মণের বেশি পাওয়া যাবে না।

একই এলাকার কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, আনন্দের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু আগাম বন্যার পানিতে জমি ডুবে যাওয়ায় ঈদের সব আনন্দ শেষ। ঈদের দিনও পানিতে আমাদের ধান কাটতে হয়েছে। ঈদের আগে শ্রমিক পাওয়া গেলেও বিপদকালীন সময়ে ১২০০-১৪০০ টাকাতেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

৫ বিঘা ধানের সাড়ে তিন বিঘাই পানিতে তলিয়ে গেছে মানিক মিয়ার। তলিয়ে যাওয়ার ধান কোনোরকমে খড় ছাড়া কেটে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি জানান, কৃষকের এখনও মাঠে অর্ধেকেরও বেশি ধান কাটা বাকি আছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এছাড়াও বেশিরভাগ জমিতে কৃষক খড় কাটতে না পারায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে বলেও জানান তিনি।

কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। বন্যায় ধান কাটা, মাড়াই ও পরিবহনে খরচ বেড়ে বিঘাপ্রতি দাঁড়াবে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ভালো-খারাপ যা-ই ফলন হোক, সেটিও নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকসানের আশঙ্কা আছে।

Advertisement

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চাটমোহর উপজেলায় ৯ হাজার ২১৩ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২০০ হেক্টর নিচু জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। একইভাবে ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫০ হেক্টর নিচু জমি রয়েছে। এ জমিগুলোর অধিকাংশতেই ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। অন্যগুলোতে পানি ঢুকলেও তলিয়ে যাওয়া বা তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, উপজলার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জমিতে ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে যে সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এ কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এমএন/জেআইএম