লাইফস্টাইল

যত পণ্য কিনছেন, তার কতটা আসলে প্রয়োজন

যত পণ্য কিনছেন, তার কতটা আসলে প্রয়োজন

‘আমার তো আরও একটা জামা দরকার’ এই ভেবে নতুন জামা কেনা হলো। কয়েকদিন পর দেখা গেলো সেই জামাটি আর ব্যবহারই হচ্ছে না। আবারও বলা হলো, ‘এবার একটা ভালো জুতা কিনি।’ কিছুদিন পরে পুরোনো জুতার মতোই এই নতুন জুতাও আলমারির কোণায় পড়ে থাকলো। এই চক্রটাই যেন আমাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা কি সত্যিই জানি, কোনটা আমাদের প্রয়োজন আর কোনটা বিলাস?

Advertisement

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে আসে ‘মিনিমালিজম’ শব্দটি। এর সহজ বাংলা অর্থ সাধাসিধে জীবন। তবে মিনিমালিজম মানে শুধু জিনিসপত্র কমিয়ে ফেলা নয়, বরং এটি জীবনকে সহজ, অর্থবোধক ও সচেতনভাবে সাজানোর একটি জীবনদর্শন।

প্রয়োজন বলতে বোঝায় এমন কিছু যা ছাড়া জীবনযাপন বা কাজকর্ম চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন- খাবার, বাসস্থান, কাপড়, শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা। আর বিলাস হচ্ছে সেইসব অতিরিক্ত যা মূল প্রয়োজন মেটানোর পর আসে। যেমন- দামি ব্র্যান্ডের জুতা, বারবার ফোন পরিবর্তন, একাধিক গাড়ি কিংবা অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী। অনেক সময় আমাদের মনে এসব বিলাসের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয় সমাজের চাপ ও বাজারজাত বিজ্ঞাপনের প্রভাবে, বাস্তবে যার প্রয়োজনীয়তা খুবই কম।

মিনিমালিজম এমন একটি জীবনদর্শন, যেখানে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা হয়। মিনিমালিস্টরা ভাবেন, জীবনে আসলে কোন জিনিসগুলোর সত্যিই দরকার। প্রতিটি জিনিস কেনার আগে তারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, এটি কি আমার প্রতিদিনের জীবনে উপকারে আসবে? ফলে একজন মিনিমালিস্ট হয়তো ১০টি জামার বদলে ৩টি জামা রাখেন। তবে সেগুলো মানসম্মত ও প্রিয়। দামি ফোন না কিনে ব্যবহার করেন সাধারণ অথচ কার্যকর ফোন। কারণ তার মূল উদ্দেশ্য যোগাযোগ, লোক দেখানো নয়।

Advertisement

এই জীবনযাপনের একাধিক সুফল রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় জিনিস কম থাকলে মাথার ওপর চাপও কম পড়ে। পরিষ্কার ও গোছানো পরিবেশ মনকে শান্ত রাখে। বারবার অপ্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হয়, যা ভবিষ্যতের জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়। একইসঙ্গে কম ব্যবহার মানে কম উৎপাদন ও বর্জ্য, যা পরিবেশবান্ধব জীবনধারার দিকে এগিয়ে দেয়। বস্তু থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে মানুষের প্রতি মনোযোগ বাড়ে, সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

অনেকেই মিনিমালিজমকে কৃপণতা ভেবে ভুল করেন। কিন্তু এটি কোনো কিছুই না কিনে বসে থাকা নয়। বরং সচেতন ভোক্তা হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুশীলন। আপনি চাইলে বিলাসবহুল কিছু কিনতেই পারেন, যদি সেটা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে আনন্দ ও উপকার দেয়। মূল কথা হলো নিজে বোঝা, কোনটা আমার প্রয়োজন, আর কোনটা সমাজ বা বিজ্ঞাপনের চাপ।

মিনিমালিজম শুরু করতে পারেন ঘর গোছানোর মধ্য দিয়ে। একবার আলমারি খুলে দেখুন কত জামা আপনি ব্যবহার করেন না। অপ্রয়োজনীয় জিনিস দান করুন বা বিক্রি করুন। কেনার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন এটা কি আমার সত্যিকারের প্রয়োজন, নাকি শুধু শখ? একইসঙ্গে ডিজিটাল মিনিমালিজম চর্চা করুন। অহেতুক স্ক্রলিং কমিয়ে দিন, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখুন, কোন কোন জিনিস আপনার সময়, মনোযোগ ও শক্তি কেড়ে নিচ্ছে।

আমাদের সমাজে একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে- কে কত বেশি কিছু সংগ্রহ করতে পারে। অথচ জীবন মানে ‘বেশি’ নয়, বরং ‘যথেষ্ট’। মিনিমালিজম আমাদের শেখায় অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকা যায়, যদি সেটা মন থেকে আসে।

Advertisement

প্রয়োজন আর বিলাসের পার্থক্য বোঝার মাধ্যমে আমরা কেবল টাকার সাশ্রয়ই করি না, বরং নিজের সময়, মনোযোগ ও জীবনের মানও বাড়িয়ে তুলি। মনে রাখতে হবে, যেটা না থাকলে চলেই না, সেটাই প্রয়োজন। তাই এখন সময় এসেছে বাহুল্য নয়, গভীরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার। ফলে মিনিমালিজম হতে পারে আপনার জীবনের নতুন পথচলা।

এএমপি/এমএস