বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংকট নিরসনে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিদ্যুৎ বিভাগের (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স-২ শাখা) উপসচিব রোকসিন্দা ফারহানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
Advertisement
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা, সব মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল এবং সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এবং অন্যায়ভাবে বদলি করা কর্মীদের পদায়নের বিষয়টি সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতির সাথে বিবেচনাপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে বিদ্যুৎ বিভাগের বাজেট অধিশাখার যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে আছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ আব্দুল হালিম। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবকে (প্রশাসন-২ শাখা) সদস্য সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
এই কমিটির কার্যপরিধি হচ্ছে সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা। সব মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল এবং সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এবং অন্যায়ভাবে বদলি করা কর্মীদের পদায়নের বিষয়টি সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করার নিমিত্ত সুপারিশ প্রদান। কমিটি প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও অফিস আদেশে বলা হয়।
Advertisement
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতো অভিন্ন চাকরি বিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের বিষয়ে উত্থাপিত দাবি পর্যালোচনার লক্ষ্যে ইতঃপূর্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বিবেচনাসহ অংশীজনদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটিতে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে আছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ আব্দুল হালিম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এবং অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিবকে (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স-২ শাখা) সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় অভিন্ন চাকরি বিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের বিষয়ে ইতঃপূর্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বিবেচনাসহ অংশীজনদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মিত করণসহ দুই দফা দাবিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। সবশেষ তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সরকারের আশ্বাসে ঈদের আগে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
Advertisement
তাদের ৭ দফা দাবিগুলো ছিলো—
১. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী, অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ।
২. এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা দেশের অন্যান্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন।
৩. মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিক এবং পৌষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ।
৪. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল।
৫. গ্রাহক সেবার স্বার্থে লাইনক্রুসহ সব হয়রানি ও শাস্তিমূলক বদলি আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন করতে হবে।
৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা/শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়নের জন্য অতিদ্রুত জনবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৭. পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী বোর্ড গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।
এনএস/এমআরএম/এএসএম