আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা যেভাবে তছনছ করলো ইরান

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা যেভাবে তছনছ করলো ইরান
 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত হানায় বিস্মিত বিশ্লেষকরা। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মালিক হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলো—তা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

Advertisement

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই মাল্টি-লেয়ারড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

> আয়রন ডোম: স্বল্পপাল্লার রকেট ও মর্টার প্রতিরোধে কার্যকর।> ডেভিডস স্লিং: মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহৃত।> অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩: দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যবহৃত।> বারাক-৮ ও অন্যান্য: ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।

তবে, এসব সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে—বিশেষ করে সংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে।

Advertisement

ইরান কীভাবে ভেদ করলো এই প্রতিরক্ষা?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান কয়েকটি কৌশলের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দুর্বল করে দেয়:

১. সংখ্যার ভারে চেপে বসা

ইরান প্রায় ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন একযোগে পাঠিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলে। প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করতে কমপক্ষে দুটি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র লাগে, যা দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে।

২. হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার

Advertisement

ইরানের ‘ফাত্তাহ-২’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (এইচজিভি) যুক্ত, যা শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি গতিতে চলতে পারে এবং গতিপথ অনির্দেশ্য। এটি বর্তমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম।

৩. ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র

হোভেইজেহ বা অন্যান্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিচ দিয়ে ধীরে ধীরে উড়ে যায়, অনেকটা চালকহীন ছোট প্লেনের মতোই। এগুলো রাডার ফাঁকি দিয়ে টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।

৪. ভুয়া টার্গেট

ইরান ডিকয় (ভুয়া লক্ষ্যবস্তু) পাঠিয়ে ইসরায়েলের রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত করে। এতে মূল ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সহজে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে।

৫. রাডার-বিধ্বংসী প্রযুক্তি

কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসে যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডার থেকে নিজেকে আড়াল রাখতে পারে।

কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ইসরায়েল?

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা এখনো আকাশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম। তবে তারা স্বীকার করেছে যে ‘সব সিস্টেম শতভাগ কার্যকর নয়।’

ভবিষ্যতের আশঙ্কা

এই সংঘাত ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিচ্ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর—দুই পক্ষের মজুতই কমে আসছে। তাই প্রতিটি হামলা ও প্রতিরক্ষাই এখন মূল্যবান। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে আধিপত্য রাখা কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: আল-জাজিরাকেএএ/