গত শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর তেহরানও পাল্টা হামলা চালায়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছেই এবং দিন দিন তা আরও তীব্র হচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে যে কারণে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে তা যদি ব্যর্থ হয়? যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা মাটির খুব গভীরে থাকে এবং খুব সুরক্ষিত থাকে?
Advertisement
ধারণা করা হয়, সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক অস্ত্রে পরিণত হওয়া থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে আছে ইরান। তাদের ৪০০ কেজি পারমাণবিক জ্বালানি যা দশটি বোমা বানাতে যথেষ্ট...যদি ধ্বংস না হয়? ধারণা করা হয়, গোপন খনির গভীরে লুকানো থাকতে পারে সেই জ্বালানি।
ইসরায়েল হয়তো ইরানের কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। কিন্তু কোনো বোমাই দেশটির জ্ঞান এবং দক্ষতা ধ্বংস করতে পারবে না।
ইসরায়েলের আক্রমণের জেরে ইরানের নেতৃত্ব যদি মনে করে আরও আক্রমণ প্রতিহত করার একমাত্র উপায় হলো যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করা?
Advertisement
ইরানের নতুন সামরিক নেতারা যদি তাদের মৃত পূর্বসূরীদের চেয়ে বেশি একগুঁয়ে এবং কম সতর্ক হন, তাহলে কী হবে? অন্ততপক্ষে, এটি ইসরায়েলকে আরও আক্রমণ করতে বাধ্য করতে পারে। এর ফলে ওই অঞ্চল ক্রমাগত আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েলিদের কাছে এই কৌশলের একটি নির্মম নাম রয়েছে; তারা একে বলে ‘ঘাস কাটা’। দুপক্ষের মধ্যে এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই সংঘাতের কারণে এরই মধ্যে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দুদেশের মধ্যে যদি এই সংঘাত আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলে তবে তা বিশ্বে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। চলমান উত্তেজনার প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বুধবার (১৮ জুন) ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৬ সেন্ট বা ০.৩ শতাংশ বেড়ে ৭৬.৭১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
একই দিনে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ৩৫ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫.১৯ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে হরমুজ প্রণালীতে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায়। যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট সমুদ্রপথে পরিবাহী তেলের এক-পঞ্চমাংশ যায়।
ইরান হলো ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। যেটি দিনে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানি তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও ওপেক প্লাস দেশগুলোর অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে তা সামাল দেওয়া সম্ভব।
Advertisement
বলা হচ্ছে, যদি ইরানের তেল উৎপাদন বা রপ্তানি বড় ধরনের বাধার মুখে পড়ে, তবে তেলের দামে আরও চাপ আসবে। তবে তেমন বিপর্যয় হলেও তা পূরণ করা সম্ভব অতিরিক্ত উৎপাদনের মাধ্যমে। গত দুই সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ ডলার বেড়েছে।
টিটিএন